• ছাত্রদের অত্যন্ত মুফিদ উপদেশ,,,

    তালিবে ইলমদের প্রতি জরুরি হেদায়াত : নমুনায়ে আসলাফ
    হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ,

    ইলমের জন্য দুআর ইহতিমাম করতে হবে

    ইলম আল্লাহ পাকের সিফাত। এ সিফাত তাঁর থেকে নিতে হবে। এজন্য দুআর ইহতিমাম করতে হবে। দুআ ছাড়া শুধু যেহেন-যাকাওয়াত দিয়ে ইলম হাসিল হয় না। মাওলার থেকে নিতে হলে দুআর ইহতিমাম করতে হবে।



    তালিবুল ইলমের নিয়ত

    দুই নাম্বার হল নিয়ত। চারটা নিয়ত বিশেষভাবে থাকা দরকার।  ১- ইলমে দ্বীন অর্জন করব রেযায়ে ইলাহীর জন্য। ২- ইলম মোতাবেক আমল করার জন্য। ৩- আমি যে ইলম শিখব তা শুধু আমার এলাকাতেই নয়; বরং সারা বিশে^ এ ইলমের প্রচার-প্রসার ঘটাব। ৪- আল্লাহ পাক যদি আমাকে কলমি শক্তি দেন, লেখার যোগ্যতা দেন, তাহলে লেখার মাধ্যমে এ ইলমকে আমি সারা বিশে^ প্রচার করব। একজন তালিবে ইলমের কমপক্ষে এ চারটি নিয়ত করা চাই।



    ইলমের জন্য ইনহিমাক জরুরি

    ইলমী মারহালা তয় করার জন্য নিয়তের পরে যে জিনিসটা খুব বেশি জরুরি, সেটা হল, ইনহিমাক। একাগ্রতা। একসূয়ী। একাগ্রতা-একসূয়ী যত বেশি হবে, ইলমী ফায়যানও তত বেশি হবে। খোদ যিনি খাতামুন নাবিয়্যীন, তাঁর কাছেও ওহী আসার আগে -حُببَ إليه الْخَلاء- একাকী থাকাকে আল্লাহ পাক প্রিয় করে দিয়েছেন। কাজেই ইলমী মাকাম তয় করার জন্য মৌলিকভাবে খালওয়াত, একাগ্রতা ও একসূয়ী অপরিহার্য। হাকীমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন’ খালওয়াত হলে সুকূন হয়। আর সুকূনের কাইফিয়াত হলে ইতমিনানের সাথে ইলম হাসিল করা যায়। এর বিপরীত যদি ইখতিলাত ও মেলামেশা হয় তাহলে ইনতেশার শুরু হয়। ইনতেশার দ্বারা দিল বে-চাইন হয়ে যায়। পেরেশান হয়ে যায়। সুকূন নসীব হয় না। ইলমের মাকামও তয় করা যায় না। রূহানিয়্যাতের মাকামও তয় করতে পারে না।

    এজন্য ইলমী মাকাম তয় করতে হলে খালওয়াত, একাগ্রতা, একসূয়ী, একমন, একধ্যান, একখেয়াল থাকাটা অপরিহার্য। আর এটা যার মধ্যে যত বেশি হবে, তার কলবে ইলমে নববীর ফায়যান তত বেশি হবে। আমার উস্তায মাওলানা ওয়াহিদুয যামান কিরানবী ছাহেব হুযূর বলতেন- কিছু তালিবে ইলম এমন আছে, যার জিস্ম দরসগাহে ঠিক, কিন্তু দিল-দেমাগ দরসগাহে নেই। সে অন্য কোথাও সফর করছে। তার যেহেন এবং ফিকির অন্য কোথাও। উস্তাযের তাকরীর শুনছেও না, বুঝছেও না। তার দেমাগে হয়ত তার বাড়ির কোনো ঝামেলা বা পেরেশানী আছে। সেখানে চক্কর দিচ্ছে। কিংবা কোনো বন্ধুর সাথে সম্পর্ক আছে, সেখানে চক্কর দিচ্ছে। দরসগাহে তার জিসম আছে; কিন্তু তার দিল-দেমাগ নেই। এজন্য দরসে বসতে হলে শুধু জিসমানী হাজিরী যথেষ্ট নয়। বরং নিজের দিল-দেমাগও সম্পূর্ণরূপে উপস্থিত রাখতে হবে।

    মনে রাখবেন, একসূয়ী-একাগ্রতার কোনো বিকল্প নেই। একসূয়ী-একাগ্রতার আদনা মেছাল হল পরীক্ষার আগের সময়টা। যখন তালিবে ইলমের যেহেন সবকিছু থেকে সরে কিতাবে এসে যায়। এজন্য তখন অল্প সময়ে অনেক মুতালাআ করা যায়। কিতাব তাড়াতাড়ি ইয়াদ হয়ে যায়। কেন এটা হয়?  একাগ্রতা-একসূয়ী আছে এজন্য।

    বর্তমান যুগে  একাগ্রতা-একসূয়ীর সবচেয়ে বড় বাধা হল মোবাইল ফোন। ফেইসবুকসহ আরো বিভিন্ন ঝামেলা। একজন তালিবে ইলমকে ধ্বংস করার জন্য, ইলমী মাকাম থেকে তাকে সরানোর জন্য এটাই যথেষ্ট। এজন্য প্রতিটি তালেবে ইলমকে শপথ নিতে হবে, যত দিন আমি অন্তত রসমী তালিবে ইলম আছি, এমনিতে তো “মিনাল মাহদি ইলাল লাহদ” হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্তই তালিবে ইলম। কিন্তু রসমী তালিবে ইলম যাকে বলা হয়, এ সময়টায় অন্ততপক্ষে কোনো তালিবে ইলিমের কাছে যেন কোনো মোবাইল ফোন না থাকে। মোবাইলের সাথে যেন কোনো সম্পর্ক না হয়। তালিবে ইলমের সম্পর্ক হবে কিতাবের সাথে। উস্তাযের সাথে। মাদরাসার ঘর-দোরের সাথে। বাইরের জগতের সাথে তার কোনো সম্পর্ক হবে না। বরং সম্পর্ক হবে কিতাবের সাথে। এমন গভীর সম্পর্ক হবে যে, সে মোতালাআয় ডুবে যাবে। এমনভাবে ডুবে যাবে যে, নাওয়া-খাওয়াই ভুলে যাবে। পিপাসার কথা ভুলে যাবে। কোনো কিছুরই খবর থাকবে না। হযরত শায়েখ যাকারিয়া রাহ.-এর ঘটনা। সকাল বেলা বাসা থেকে খাবার আসে। কিন্তু ইলমী ইনহিমাকে তিনি এত ডুবে ছিলেন যে, খাওয়ার কথা ভুলেই গেছেন। সারা দিন না খেয়ে মুতালাআ ও দরসের মধ্যে ব্যস্ত ছিলেন। আসরের পরে হঠাৎ দেখেন যে, মাথা চক্কর দিচ্ছে। চিন্তা করলেন, কীরে, মাথা চক্কর দেয় কেন? পরে মনে পড়েছে, আজকে তো খাবার খাওয়া হয়নি!

    চিন্তা করুন, কতটুকু ইলমী ইনহিমাক থাকলে মানুষ ক্ষুধার কথাও ভুলে যেতে পারে! মাওলানা আব্দুল হাই লখনবীর মশহুর কিসসা। মুতালাআর সময় তিনি পানি চেয়েছেন। তাঁর ওয়ালেদ ছাহেব মাওলানা আব্দুল হালীম ছাহেব বললেন,  হায়রে, আমার খান্দান কি এভাবে শেষ হয়ে যাবে?! খাদেমকে বললেন, পানি দিও না! এক গ্লাস কেরোসিন তেল দাও! খাদেম তাই করল। কেরোসিন তেল দিয়েছে, আর তিনি সেই তেলই খেয়ে ফেলেছেন এবং মুতালাআর মধ্যে ডুবে গেছেন। তাঁর ওয়ালেদ ছাহেব হাকীম ছিলেন। এতগুলো কেরোসিন তেল খেয়েছে, স্বাস্থ্যের জন্য তো ক্ষতিকর হবে। তাই সেটার এলাজের জন্য পরে তিনি আবার ওষুধ দেন এবং বলেন, আলহামদু লিল্লাহ! খান্দান বাকি থাকবে। অর্থাৎ, মুতালাআর সময় কি পানি খেয়েছে, না কেরোসিন তেল খেয়েছে সে অনুভূতিটাও ছিল না। ইলমী ইনহিমাক কী জিনিস, তা বোঝানোর ভাষা আমার কাছে নেই।

    ذوق ایں بادہ نہ دانی بخدا تانہ چشی۔



    মুতালাআর স্বাদ

    আসলে মুতালাআর মধ্যে যত স্বাদ আর যত মজা, দুনিয়ার আর কোনো কিছুর মধ্যে এত স্বাদ আর এত মজা নেই। মুতালাআর মধ্যে যে স্বাদ আর মজা রয়েছে, এর চেয়ে স্বাদের জিনিস, এর চেয়ে মজার জিনিস আর কিছুই হতে পারে না। যদি সত্যিকারার্থে যওকে মুতালাআ সৃষ্টি হয়, শওকে মুতালাআ এসে যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ, ইলমী মাকাম তয় হবে। দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত আমরা যে লেখাপড়া করি, এখানে ইলম অর্জন করি না। বরং যেটা অর্জন করি সেটা হল ‘কুওয়াতে মুতালাআ’। আর কিছুই অর্জন করিনি। ইলম আসেনি। এসেছে কুওয়াতে মুতালাআ। মুতালাআ করলেই এখন ইলম আসবে। এজন্য হাকীমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেছেন, ফারাগাতের পর কমপক্ষে দশটি বছর মুতালাআর মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা চাই। অন্য কোনো শগফ, অন্য কোনো শুগল যেন আমাকে পেয়ে না বসে। তাহলে কিছুটা হলেও ইলমী মুনাসাবাত পয়দা হবে।

    শাইখুল ইসলাম হযরত মাদানী রাহ. তাদরীসও করতেন, মাঠে ময়দানে কাজও করতেন। কিন্তু তাঁর যিন্দেগির একটা সময় এমন গিয়েছে যে, তিনি শুধু মুতালাআর মধ্যে ডুবে ছিলেন। মদীনা মুনাওয়ারায় যখন পড়াতেন, কোনো কোনো দিন ১২-১৪ ঘণ্টাও পড়াতেন। কারণ শুধু হানাফী মাযহাব নয়, মাযাহিবে আরবাআর কিতাব পড়াতেন তিনি। ওয়াসী মুতালাআর অধিকারী ছিলেন। মুখস্থ তাকরীর করতেন হাওয়ালাজাতসহ।

    তো, মসজিদে নববীর মত বা-বরকত জায়গায়, রওজায়ে আতহারের পাশে বসে দরস দিয়েছেন এবং নিজেকে মুতালাআর মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন। ওই যমানায় সংসারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছিল। না খেয়ে এক দিন, দুই দিন, তিন দিনও ছিলেন। এ অবস্থায়ও ছবক পড়াতেন। কোনো ছাত্র টের পেত না। সংসারের উপর কঠিন হালাত গিয়েছে। কিন্তু এ দুরবস্থা তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেননি। ইলমের মধ্যে মগ্ন ছিলেন।

    এটা তো আমাদের নিকটতম আকাবিরের কথা। আর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন এবং সালাফে সালেহীনের হালাত তো আপনারা জানেনই। মুহাম্মাদ ইবনে ফযলকে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন বললেন, আপনি লেবাসের ঐ হাদীসটি আমাকে শোনান! তিনি হাদীস বর্ণনা শুরু করলেন। ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন বললেন, যদি আপনার কিতাব থেকে শোনাতেন..! মুহাম্মাদ ইবনে ফযল কিতাব আনতে উঠলেন আর ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন তাঁর কাপড় চেপে ধরলেন। বললেন, আগে (মুখস্থ) লিখিয়ে দিন। কারণ আশংকা আছে আপনার সঙ্গে আর সাক্ষাৎ না হওয়ার। তাই তিনি হাদীসটি আগে (মুখস্থ) লেখান। এরপর কিতাব এনে তাঁকে পড়ে শোনান।

    এ ঘটনা থেকে আমাদের দুটো ছবক নেওয়ার আছে। এক হল, মুহাদ্দিসীনে কেরাম মওতকে একেবারে নিজের চোখের সামনে মনে করতেন। ইসতেহযারে মওত তাদের কী পর্যায়ের ছিল, এ ঘটনা থেকে তা বোঝা যায়! দ্বিতীয়ত ইলমের শওক তাদের কী পরিমাণ ছিল সেটাও বোঝা যায়। আপনি বাসায় যাচ্ছেন কিতাব আনতে, এর মাঝে যদি আমি মারা যাই, তাহলে তো হাদীসটি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাব। এজন্য আগে মুখস্থ শুনিয়ে যান, পরে কিতাব থেকে শুনিয়েন! শামায়েলে তিরমিযীর কিতাবুল লেবাসে এ ঘটনা আছে। আকাবিরে আসলাফে উম্মতের ইলমী ইনহিমাকের ঘটনা কিতাবে ভুরি ভুরি। সেগুলো মুতালাআ করে জেনে নিবেন! এ মওযু তো লম্বা মওযু!

    আল্লাহ পাক প্রতিটি ভাইকে যওকে মুতালাআ এবং শওকে মুতালাআ দান করুন! ইলমি ইনহিমাক দান করুন- আমীন।

    ভাই! দুনিয়া ওয়া মা ফীহা থেকে গাফেল হয়ে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে মুতালাআর মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। কারণ ইলমী ইনহিমাক, একাগ্রতা ও একসূয়ীর কোনো বিকল্প নেই। যদি থাকত, বলতাম। যারাই ইলমী মাকাম তয় করেছেন, তাদের যিন্দেগীতে এ সিফাতটা ছিল আহাম। বর্তমান যুগে তালিবে ইলম তালাশ করে  পাওয়া যায় না।



    নোটভিত্তিক পড়াশোনার ভয়াবহতা

    এখন ছাত্ররা কিতাব বাদ দিয়ে ছুটছে নোটের পেছনে! বেফাকে যেহেতু ভাল ফলাফল করতে হবে, তাহলে কী করতে হবে?  নোট দেখতে হবে! সুওয়ালের জবাবগুলো সংগ্রহ করতে হবে। আমি আমাদের মাদরাসায় সেদিনও আলোচনা করেছি। বলেছি, তালিবে ইলমদের কাছে যত নোট আছে সব জমা নিয়ে নিন! কোনো নোট চলবে না। নোটের মৌলভীর এখানে দরকার নেই। সত্যিকারার্থে বনতে হলে মূল কিতাব মুতালাআ করতে হবে। মূল কিতাব মুতালাআ না করে ইলম হাসিল করা যাবে না। ‘নোট-মোট’  চলবে না। ‘‘তোমরা পরীক্ষায় পাস কর, না ফেল কর, সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমার এখানে নোট চলবে না!’’

    যাইহোক, নোটভিত্তিক পড়ালেখার যে রেওয়াজ মাদরাসাগুলোতে ঢুকে পড়েছে, সেটা আরেকটা তাবাহী বটে। হযরত মাওলানা আবুল হাসান কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুর ‘তানযীমুল আশতাত’। নিঃসন্দেহে এটা তাঁর একটা ইলমী কারনামা। বড় মেহনত করে লিখেছেন। অনেক তালিবে ইলম এ ‘তানযীমুল আশতাত’ মুতালাআ করে পরীক্ষা দেয়। আর অন্য কোনো শরাহ-শুরুহাতে হাত দেয় না। এ তালিবে ইলম এ খোলাসা মুতালাআ করে কখনো ইলমী মাকাম তয় করতে পারবে না। কেন পারবে না? কারণ এক পৃষ্ঠা খোলাসার পেছনে তাঁর হয়ত পাঁচ শ পৃষ্ঠা, হাজার পৃষ্ঠা মুতালাআ ছিল। এরপর তিনি এ এক পৃষ্ঠার খোলাসা লিখেছেন। তাহলে তাঁর খোলাসার পেছনে মুতালাআ আছে পাঁচ শ থেকে হাজার পৃষ্ঠা। এজন্য এ খোলাসার পেছনে তাঁর বসীরাত আছে। কিন্তু যে তালিবে ইলম সরাসরি খোলাসা মুতালাআ করছে, শরাহ-শুরুহাত দেখছে না, তার বসীরাত হবে কীভাবে? বসীরাত অর্জন করতে হলে নিজস্ব মুতালাআ লাগবে। আগে নিজে ব্যাপক মুতালাআ করবে নির্দিষ্ট মওযুর উপর। এরপর নিজে খোলাসা তৈরি করবে। তিনি দশটা তাওজীহ করেছেন, তুমি দশটা নয়; পাঁচটাই কর। কিন্তু নিজে মুতালাআ করে খোলাসা তৈরি কর। তাহলে হবে কী, তোমারও এ খোলাসার পেছনে পাঁচশ পৃষ্ঠা মুতালাআ থাকবে। আর মাসআলার উপর তোমার বসীরাত তৈরি হবে।

    এজন্য নোটভিত্তিক লেখাপড়া, এটাও তাবাহী ও বরবাদির পয়গাম। আর শুধু খোলাসা দেখে দেখে মৌলভী বনা, সেটাও তাবাহী ও বরবাদির পয়গাম। সত্যিকারার্থে মৌলভী হতে হলে তোমাকে ব্যাপকভাবে মুতালাআ করতে হবে। একই মওযুর উপরে বিভিন্ন কিতাব মুতালাআ করতে হবে।



    মুতালাআ তিন প্রকার

    মুতালাআ তিন প্রকার। এক নাম্বার হল কিতাবভিত্তিক মুতালাআ। যিনি যে কিতাব পড়াবেন, তার কিতাবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কামা হক্কুহু হল্ থাকা চাই। ইবারত, তরজমা এবং মতলব হুযূরের যেহেনে পরিষ্কারভাবে থাকতে হবে। ঝাপসা নয়। কিছু লোকের অবস্থা হল- ‘উন কে পা-স মা‘লুমাত তো হ্যাঁয়; লেকিন ইলম নেহী হায়!’ এমন কিছু লোক আছে, যার মালুমাত আছে; কিন্তু ইলম নেই। নিজেই বোঝে না। ওই যে, ইবারত মুখস্থ আছে, আর তরজমা উল্টা-সিধা করে দিচ্ছি। আসলে বিষয়টি কী, তা নিজেই বোঝে না। এজন্য অনেকের কাছে মা‘লুমাত আছে, ইলম নেই। ইলম আর মা‘লুমাত এক নয়। বরং মাসআলার আগাগোড়া বোঝার জন্য তাদাব্বুর ও গবেষণা লাগবে। তাহলেই আপনার মধ্যে ইলম আসবে।

    যাইহোক, আসরে হাজেরের ফিতনাগুলো সম্পর্কে একটু তাম্বীহ করছি। এক হল নোটের ফিতনা, যেটা বেফাকভুক্ত বিভিন্ন মাদরাসায় ঢুকে পড়েছে। এজন্য বেফাকও এখন প্রশ্নপত্রের পলিসি বদলে দিয়েছে। পরীক্ষা হবে ইসতে‘দাদের; মা‘লুমাতের নয়। সেজন্যই ই‘রাব লাগানো, হাদীসের তরজমা, আলফাযে গরীবা আসলে তার হল্লে লোগাত, এগুলো চাওয়া হয়। এখন যার কিতাবী ইসতে‘দাদ নেই সে জবাব দিতে পারবে না। সে এখানে ধরা পড়ে যাবে। নোটকে মার দেওয়ার জন্যই বেফাক এ পলিসি বদল করেছে।

    যাইহোক, আমি যে কথা বলতে চাই সেটা হল, খোলাসা পড়ে, নোটবুক পড়ে আমি মৌলভী হতে পারব না। আমাকে ব্যাপক মুতালাআ করে আসতে হবে। এ মুতালাআ তিন প্রকার।

    এক নাম্বার যেটা বললাম, কিতাবভিত্তিক মুতালাআ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কামা হক্কুহু কিতাবের ইবারত সহীহ পড়া চাই। ইবারতের সহীহ তরজমা করা চাই। কোথাও যেন ঝাপসা না থাকে। এভাবে পরিশ্রম করতে হবে। এ হল এক নাম্বার মুতালাআ। কিতাবভিত্তিক মুতালাআ।



    দ্বিতীয় প্রকার মুতালাআ

    দুই নাম্বার হল, ফন্নী মুতালাআ। ফন্নী মুতালাআর জন্য যে বিষয়ে ধরব, তার নিচের থেকে উপরের সংশ্লিষ্ট সব কিতাব মুতালাআ করতে হবে। যেমন কিতাবুত তাহারাতের মুতালাআ শুরু করেছেন, তো নিচের কিতাব- তালীমুল ইসলাম, বেহেশতি জেওর, মালাবুদ্দা মিনহু, নূরুল ঈযাহ, কুদূরী, কানযুদ দাকায়েক, শরহে বেকায়া, হেদায়াসহ দরসিয়্যাতের সকল কিতাব থেকে তাহারাতের উপর মুতালাআ করতে হবে।

    এরপর চলে যাব উপরের কিতাব; বাদায়েউস সানায়ে, আলবাহরুর রায়েক, ফাতাওয়া আলমগিরী, ফাতাওয়া শামীসহ আরো যেসব কিতাব আছে সেগুলোতে। তাহারাতের উপর সব কিতাব থেকে মুতালাআ করব। এর নাম হল ফন্নী মুতালাআ।

    ফন্নী মুতালাআতে আমাকে যে কাজটা করতে হবে সেটা হল, পুরো মুতালাআর পরে যে খোলাসা ও নির্যাস বের হবে, সেটা আমাকে একটা খাতায় নোট করতে হবে। দ্বিতীয়ত কোন্ কিতাবে বা কোন্ শরহে নতুন কী পাওয়া গেল, সেটা হাওয়ালাজাতসহ নোট রাখতে হবে। ফন্নী মুতালাআ যদি এ তরিকায় হয় তাহলে ফায়েদা হল, পরে এ নোট দেখলেই পুরো বহস সামনে চলে আসবে ইনশাআল্লাহ! কিতাবুস সালাত শুরু হয়েছে তো, নিচের থেকে উপর পর্যন্ত সব কিতাবের মুতালাআ করতে হবে সালাতের ওপরে। তাহলে একটা অভিজ্ঞতা হাসিল হবে। এখানে আবার নোট করতে হবে সালাতের মূল মাসায়েলগুলো কী কী? মিন হাইসু আনওয়াইস সালাত কী কী মাসআলা আছে? এবং হার মাসআলার আগাগোড়া, খোলাসা কী, সেটা নিজস্ব আঙ্গিকে সাজাতে এবং গোছাতে হবে। এভাবে হয় ফন্নী মুতালাআ। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব কিতাব মুতালাআ করে তার খোলাসা বের করা।

    আসরারে শরীআত সম্পর্কে জানতে হলে শাহ ওয়ালী উল্লাহর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা মুতালাআ করতে হবে। মাসআলার লিম ও হেকমত এবং একেক কিতাব ও বাবের মাসআলাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও তারতীব জানতে হলে বাদায়েউস সানায়ে মুতালাআ করতে হবে। ইসতেদলাল বিল হাদীস পড়তে হলে নাসবুর রায়াহ’ আছে। আহকামুল কুরআন, আবু বকর জাসসাস, তাফসীরে মাযহারী এ ধরনের কিতাব। এগুলো মুতালাআ করলে ইসতেদলাল বিল হাদীস, অর্থাৎ মাসআলার উপর হাদীস দিয়ে দলীল দিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে গায়রে মুকাল্লিদের ফিতনা চলছে। যেন হার মাসআলাতে হাদীস দিয়েও ইসতেদলাল করা যায়। যাতে এটা না বলতে পারে যে, হানাফী মাযহাবের মাসআলাগুলোর পক্ষে কোনো সহীহ হাদীস নেই। তো দুই নাম্বার হল ফন্নী মুতালাআ।



    তৃতীয় প্রকার মুতালাআ

    আর তিন নাম্বার হল কুরআন-সুন্নাহর ব্যাপক মুতালাআ। কুরআন-সুন্নাহর ব্যাপক মুতালাআর দ্বারা এক আম বসীরত অর্জন হবে। এই আম বসীরতকে তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন বলা হয়। নেসাব কিন্তু দাওরায়ে হাদীস ফারেগ হওয়া নয়। নেসাব হল, তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন-দ্বীনের ব্যাপক সমঝ অর্জন করা।



    তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন-এর জন্য মুতালাআয়ে কুরআনের বিকল্প নেই

    দ্বীনের বসীরত অর্জন করা। এর জন্য কুরআনে কারীমের ব্যাপক তিলাওয়াত লাগবে। নফসে কুরআনে কারীমের ব্যাপক তিলাওয়াত লাগবে। আমাদের ছাত্র মাওলানা হেমায়েত একবার প্রশ্ন করল, হুযূর! রমযান কীভাবে কাটাব? আমি বললাম যে, রমযানে কোনো কাজ নেই। কাজ শুধু একটাই; কালামে পাকের তিলাওয়াত। সারা রমযান শুধু কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতে কাটাবে! সাথে একটা খাতা রাখবে। বিষয়বস্তুগুলো নোট করবে।

    কথার কথা, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা কুরআনে কারীমে কত বার এসেছে? কত সূরায় এসেছে। তিলাওয়াতের ফাঁকে এটাও নোট করে ফেলবে। বিভিন্ন  আম্বিয়ায়ে কেরামের হালাত কুরআনে পাকে এসেছে; কোন্ নবীর হালাত কত জায়গায় এসেছে, তিলাওয়াতের ফাঁকে এটাও নোট করে ফেলবে। আহকামের আয়াতগুলো নোট করবে।

    এভাবে কুরআনে কারীমের কাসরাতে তিলাওয়াত করতে হবে, মা‘আ তাদাব্বুর। রমযানে আর কোনো কাজ নেই। কাজ একটাই। ফায়েদা হবে কী? পুরো মাযামীনে কুরআন তোমার চোখের সামনে ভাসতে থাকবে ইনশাআল্লাহ! আর ইলমে নববীর সারে-চশমা হল কুরআনে কারীম। এজন্য কুরআনে কারীম থেকে আলগ হয়ে আর যাই হোক, মৌলভী হওয়া যাবে না। মৌলভী হতে হলে কালামে খোদাওয়ান্দীর কাসরাতে তিলাওয়াত লাগবে। বিশেষভাবে রমযান মাস কুরআনের মাস। সমস্ত আসমানী কিতাব আল্লাহ পাক রমযান মাসে অবতীর্ণ করেছেন। এজন্য রমযান মাসকে বিশেষভাবে কালামে খোদাওয়ান্দীর জন্য রাখতে হবে। ব্যাপক তিলাওয়াত করতে হবে। আকাবিরে দারুল  উলূম দেওবন্দের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটা একটা আহাম বৈশিষ্ট্য যে, রমযান মাস তাঁরা তিলাওয়াতেই কাটাতেন। এমনিতেই মৌলভী হতে হলে কাসরাতে তিলাওয়াত লাগবে। তাহলে মাযামীনে কুরআন চোখের সামনে ভাসবে ইনশাআল্লাহ! আকীদায়ে তাওহীদ, আকীদায়ে রেসালাত, আকীদায়ে আখেরাত, জান্নাতীদের আহওয়াল, জাহান্নামীদের হালাত, এসব কিছু কুরআনে আছে কি না? সিফাতে রাব্বানিয়ার বয়ান, সিফাতে সুবূতিয়ায়ে জাতিয়া, সিফাতে সুবূতিয়ায়ে আফআলিয়া, সিফাতে সালবিয়া, সবগুলোই আছে কুরআনে। কুরআনের কোনো কোনো জায়গায় সিফাতে সালবিয়ার আলোচনা আছে, যেমন-

    سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ …

    سَبَّحَ لِلهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ

    یُسَبِّحُ لِلهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ

    এরকম সিফাতে সালবিয়াগুলো বের করা। সিফাতে যাতিয়া সাতটা বা আটটা। শরহে আকাইদে আছে, আল্লাহ তাআলা ‘হাই’ হওয়া। ‘কায়্যূম’ হওয়া। ইলম, কুদরত, সাম্‘, বাছর- এগুলো সিফাতে যাতিয়া।

    যাইহোক, তিলাওয়াতের সময় এগুলো লক্ষ্য রাখবেন। সিফাতে আফআলিয়া-

    كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ

    এটা গায়রে মুতানাহী। বমা‘না-

    لا يَقِفُ عِنْدَ حَدٍّ.

    মোটকথা কুরআনে কারীম আল্লাহ তাআলার মা‘রেফাতে ভরা। তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের তা হাসিল করা দরকার।



    তাযকিয়ায়ে বাতেন : গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়

    আর তাযকিয়ায়ে বাতেনের ক্ষেত্রে তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ।

    এক-

    اُتْلُ مَاۤ اُوْحِیَ اِلَیْكَ مِنَ الْكِتٰبِ .

    অর্থাৎ কালামে খোদাওয়ান্দীর তিলাওয়াত।

    দুই-

    وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ .

    অর্থাৎ, সালাত কায়েম করা। তিন-

    وَ لَذِكْرُ اللهِ اَكْبَرُ .

    অর্থাৎ, যিকরুল্লাহর কাসরত। ইসলাহে নফসের জন্য এ তিনটা জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এর মধ্যে এক নাম্বারই হল, কালামে খোদাওয়ান্দীর তিলাওয়াত। প্রথমত হল সিফাতে রাব্বানীকে ইলমীভাবে জানা। দ্বিতীয়ত সিফাতে রাব্বানীর তাআল্লুক হবে তার কলবের সাথে। তৃতীয়ত. সিফাতে রাব্বানীর তাহাক্কুক হবে তার কলবের মধ্যে। অর্থাৎ, সিফাতে রাব্বানীর তাজাল্লী তার সীনা এবং তার কলবের মধ্যে পড়বে। সিফাতে রাব্বানীর তাজাল্লী তার সীনা এবং কলবের মধ্যে যখন পড়বে, তখন কলব থেকে সকল রাযায়েল দূর হয়ে যাবে। কলব মুযাক্কা, মুসাফ্ফা হয়ে যাবে। আখলাকে হামীদা অটোমেটিকলি কলবে এসে যাবে। কিবর, হাসাদ, বুগয, সব দূরীভূত হয়ে তাওয়াযু, তাওয়াক্কুল, সবর, কানাআত এসব আওসাফে হামীদা কলবে এসে যাবে। রাযায়েল দূর হয়ে যাবে। যদি সিফাতে রাব্বানীর তাজাল্লী পড়ে দিলে।

    চতুর্থত, এ তাজাল্লীর একটা আছর আছে। এর দ্বারা মানুষের সাথে হুসনে খুলুকের মাদ্দা এবং মাখলুককে নফা পৌঁছানোর মাদ্দা পয়দা হয়।

    এজন্য শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহ. তাযকীর বিআলাইল্লাহর মধ্যে সিফাতে রাব্বানীকেও এনেছেন। আর সিফাতে রাব্বানী আসবে কালামে পাকের তিলাওয়াত দ্বারা।

    یٰۤاَیُّهَا الْمُزَّمِّلُ قُمِ الَّیْلَ اِلَّا قَلِیْلًانِّصْفَهٗۤ اَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِیْلًا اَوْ زِدْ عَلَیْهِ وَ رَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِیْلًا.

    আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন, অর্ধরাত বা তার চে’ একটু কম, বা একটু বেশি কালামে পাক তিলাওয়াত করার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাতকে রাত কালামে পাকের তিলাওয়াতে কাটিয়ে দিয়েছেন। এজন্য এ উম্মতের সাখত হল, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের উপর। আমরা মাদরাসায় পড়ি, অথচ আমাদের কাছে তিলাওয়াতের গুরুত্ব নেই। আহাম্মিয়াত নেই। এজন্য ভাই! বার বার বলছি, তিলাওয়াতের বিকল্প নেই।



    কুরআনের সাথে চার আমল

    তাসহীহে কুরআন, কুরআনে কারীমের নাযেরা সহীহ হওয়া চাই। এটা এক নাম্বারে বলার দরকার ছিল। তাসহীহে কুরআন ফরযে আইন। কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা জরুরি। দাওরায়ে হাদীস পড়ছে, অথচ তিলাওয়াতে লাহনে জলী। তাহলে তার ফরযে আইন বাদ পড়েছে। এজন্য কুরআনে কারীমের সাথে প্রথম আমল হল তাসহীহে কুরআন। তথা সিফাত, মাখরাজ ও তাজবীদের সাথে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত।

    দুই নাম্বার, কুরআনে কারীমের সঠিক তরজমা।

    তিন নাম্বার, কুরআনে কারীমের সঠিক মতলব বোঝা।

    চার নাম্বার, কুরআন যেসব কাজের নির্দেশ দিয়েছে, সেগুলো পালন করা। যা থেকে নিষেধ করেছে, তা বর্জন করা। তাহলে وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِیْعًا   -এর উপর আমল হবে।



    হাদীসের ব্যাপক মুতালাআ

    এরপর আহাদীসে মুবারাকার উপরে ব্যাপক মুতালাআ হওয়া চাই। আহাদীসে মুবারাকা হল মৌলিকভাবে কুরআনে কারীমের বাস্তব তাফসীর। এজন্য হাদীসের সাথে মুনাসাবাত যার যত বেশি হবে, কুরআনে কারীমের সাথে তার তত বেশি গভীর সম্পর্ক হবে। হাদীস ছাড়া কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। কুরআন বুঝতে হলে হাদীস লাগবেই।

    আমরা তো জায়গা-জমিনের প্যাঁচ বুঝি না। একটা হল নকশা। আরেকটা হল খতিয়ান। খতিয়ানের মধ্যে জমিনের দাগ নাম্বার থাকে। পরিমাণ থাকে। কিন্তু জমিনটা মাঠের কোথায় অবস্থিত সেটা খতিয়ানে থাকে না। সেটা থাকে নকশার মধ্যে। উপমহাদেশে চারটা খতিয়ান হয়েছে। প্রথম জরিপ হয়েছে ১৯২৪ -এর দিকে। এটাকে সেটেলমেন্ট জরিপ বলে। এটা সি এস। এরপর হল এস এ। এটা দ্বিতীয় জরিপ। এরপর হল আর এস। এটা তৃতীয় জরিপ। আর চতুর্থ জরিপ হচ্ছে ইদানীং যেটা চলছে। সবখানে এখনো শেষ হয়নি।

    বোঝার জন্য বলা যেতে পারে, কুরআনে কারীম বমানযিলায়ে খতিয়ান। হাদীস হল বমানযিলায়ে নকশা। আর জমিনের ক্ষেত্রে ক্ষতিয়ান আর নকশাই যথেষ্ট নয়। সাথে আমিন লাগে। দ্বীনী বিষয়ে আমিন হল সাহাবায়ে কেরামের জামাআত। কেননা কুরআনে কারীমের তালীম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আফতাবে নবুওত থেকে সরাসরি গ্রহণ করেছেন সাহাবায়ে কেরাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কওল, ফে‘ল, তাকরীর, আহওয়াল ও শামায়েল সরাসরি সাহাবায়ে কেরাম গ্রহণ করেছেন। এজন্য সাহাবায়ে কেরামের পজিশন হল আমিনের পজিশন। কুরআনের খতিয়ান, হাদীসের নকশা আপনাকে বুঝতে হবে সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যার আলোকে। আর এ তিনোটার সমন্বয় সাধন করেছেন আইম্মায়ে আরবাআ। ইমাম আবু হানীফা রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহ., ইমাম মালেক রাহ., ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.। এ চারো ইমাম কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা- এ তিনোটার সমন্বয় করে ইসলামী আইন আহকাম সংকলন, বিশ্লেষণ ও বিন্যাস করেছেন। যাকে ফিকহ বলা হয়।



    ফিকহ কুরআন-হাদীসেরই সারনির্যাস

    ফিকহ হল, মৌলিকভাবে কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যারই নির্যাস। খোলাসা এবং সারমর্ম। ফিকহ কোনো নতুন কিছু নয়। আর মুতাকাদ্দিমীনের ফিকহের মধ্যে সবই আছে। ইমাম আবু হানীফা রাহ ফিকহের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা আপনারা সবাই জানেন-

    “معرفة النفس ما لها وما عليها.”

    এর মধ্যে ইলমে কালাম দাখেল। ইবাদত দাখেল। মুআমালাতও দাখেল। মুআশারাত দাখেল। আখলাকিয়্যাত দাখেল। আর এ তরযে আমাদের নেসাবে কিতাবও আছে। যেমন- মা লা বুদ্দা মিনহু।

    এটা কিতাবুল ঈমান দিয়ে শুরু হয়েছে। এখানে কিতাবুত তাকওয়াও আছে। ইমাম গাযযালী রাহ.-এর ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন, এটাও  লেখা হয়েছে এ তরিকায়। অর্থাৎ, মুতাকাদ্দিমীনের ফিকহের আলোকে। আর মুতাকাদ্দিমীনের ফিকহে ইলমে কালাম (ইলমে আকাইদ)ও আছে। ইলমে তাসাওউফও আছে। ইলমুল আখলাকও আছে। পরবর্তীতে ইলমে কালাম মুসতাকেল আকার ধারণ করেছে। ইলমুল আখলাক এবং তাসাওউফ মুসতাকেল আকার ধারণ করেছে। আর বাকি তিনোটা ইলমুল ফিকহ-এর এই শিরোনামে রয়ে গেছে। অর্থাৎ ইবাদত, মুআমালাত এবং মুআশারাত, এগুলো মুতাআখখিরীনের ফিকহেও রয়ে গেছে।

    তো যে কথা বলতে চেয়েছি, গায়রে মুকাল্লিদরা যে বলে, আমি আছি আর কুরআন আছে। আমি আছি আর হাদীস আছে। ইমাম আবু হানীফা আবার কে? ইমাম শাফেয়ী কে? ইমাম মালেক কে? আর তাদের মধ্যে যারা কট্টরপন্থী, তারা তো নাউযুবিল্লাহ, এমনও বলে যে, ইমামগণের তাকলীদ শিরক।  তাদেরকে প্রশ্ন করুন, তুমি তো এ যুগে বসবাস করছ। বলছ, সহীহ হাদীসের উপর আমল করবে। তা ভালো কথা। কিন্তু এ হাদীস যে সহীহ, সেটা তোমাকে কে বলেছে? আল্ল

  • প্রাচীন যুগে চীনারা যখন শান্তিতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিল তখন তারা গ্রেট ওয়াল নির্মাণ করলো। চীনারা ভেবেছিল এটার উচ্চতার জন্য কেউ টপকে তাদের আক্রমণ করতে পারবে না।
    গ্রেট ওয়াল নির্মাণের প্রথম একশো বছরের মধ্যেই চীনারা তিন বার আক্রান্ত হয়। আশ্চর্যের বিষয় কোনোবারই আক্রমণকারীদের দেওয়াল টপকানোর বা ভাঙার প্রয়োজন হয় নাই। কারণ প্রত্যেকবারই আক্রমণকারীরা দেওয়াল পাহারারত রক্ষীদের উৎকোচ দিয়ে সামনের গেট দিয়ে ঢুকে গেছে। চীনারা অনেক পরিশ্রম করে মজবুত দেওয়াল তৈরি করেছিল। কিন্তু তারা দেওয়াল পাহারা দেওয়া রক্ষীদের চরিত্র মজবুত করার জন্য কোন পরিশ্রমই করেনি।

    তাহলে দেখা যাচ্ছে দেওয়াল মজবুত করার থেকে চরিত্র মজবুত করার প্রশ্নটিই আগে আসে। শুধু দেওয়াল মজবুত করার ফলাফল শূন্য।

    তাই অনেক আগেই একজন প্রাচ‍্যদেশীয় দার্শনিক বলে গেছেন তুমি যদি কোন সভ্যতা ধ্বংস করতে চাও তাহলে তিনটি কাজ কর-

    (ক) যে জাতিকে পদানত করতে চাও তার পারিবারিক গঠন আগে ধ্বংস করো। পারিবারিক গঠন ধ্বংস করতে হলে সংসারে মায়ের ভূমিকাকে খাটো করে দেখাও যাতে সে গৃহবধূ পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে।

    (খ) শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দাও। এটা করতে হলে শিক্ষককে প্রাধান্য দিও না। সমাজে তার অবস্থান নিচু করে দেখাও যাতে তার ছাত্ররাই তাকে উপহাস করে।

    (গ) তরুণ সমাজ যেন অনুসরণ করার মত কোন রোল মডেল না পায়। তাই তাদের জ্ঞানীদের নানাভাবে অপমান কর। রোল মডেলদের নামে অসংখ্য মিথ্যা কুৎসা রটাও যাতে তরুণ সমাজ তাদের অনুসরণ করতে দ্বিধাবোধ করে।
    সংগৃহিত

  • #টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের টনটনে সহীহ হাদীস!!

    বিষয়ঃ যারা বলে টাকা দিয়ে ফিতরা সংক্রান্ত আবু ইসহাক আস সাবেঈর হাদীস যঈফ তাদের জওয়াব।

    প্রশ্নঃ আমাদের এলাকার এক জনৈক শাইখ তাহক্বীক পেশ করেছেন যে “আবু ইসহাক আস সাবেঈর টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়া সংক্রান্ত হাদীসটি যঈফ কেননা আবু ইসহাক আস সাবেঈর শেষ জীবনে ইখতিলাত বা মস্তিস্ক বিকৃত হয়েছিল এবং যুহাইর বিন মুয়াবিয়া তার থেকে ইখতেলাতের পরে শুনেছিল”।আর আবু উসামাহ মুদাল্লিস রাবী। অতএব হাদিসটি জইফ!!

    জাওয়াব
     
    বাস্তব ক্ষেত্রে খুবই দুঃখজনক ভাবে কয়েকজন স্বঘোষিত মুহাক্কীকের দৌরাত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে যারা নিছক নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করনের লক্ষ্যে হাদীসের উপর জারাহ করণে বিশেষ পটুতা অর্জন করেছেন।আর মুকাল্লীদরা না জেনেই এই মিথ্যাচারকে শেয়ারের ঠেলাতে সত্য প্রমানে লেগে আছেন!

                                আবু উসামাহ সিকাহ রাবী

    ইমাম বায়হাকী তাকে সিকাহ বলেছেন। ইমাম রাযীর মতে তিনি সিকাহ। আহামাদ বিন হাম্বাল তাকে সিকাহ বলেছেন। দারাকুতনীর মতে তিনি সিকাহ। ইবনু মাঈন তাকে সিকাহ বলেছেন(মাওসুয়াতুল হাদীস-রাবী ১৪৮৪) ।

    এছাড়া, আবু উসামাহ রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেনীর মুদাল্লীস রাবী (তাবাকাতুল মুদাল্লেসীন-৪৪ নং রাবী)।

    আর এটা সর্বজন বিদিত যে এই পর্যায়ের মুদাল্লীস রাবীর মুআনআন রেওয়াত “আন” ভাষ্যের কারণে যঈফ সাব্যস্ত করা যায়না।

    এই উসুল সম্পর্কে “আত তাদলীস ওয়াল মুদাল্লীসুন” গ্রন্থে বলা হয়েছে-
    حكم اهل هذا الطبقة كحكم اهل الطبقة الاولى،تُقْبَل روايتُهم سواء صرَّحوا بالسَّماع،ام لم يصرِّحوا.

    অর্থঃএই শ্রেণীর (দ্বীতীয় শ্রেণীর) মুদাল্লীসদের রেওয়াতের হুকুম প্রথম পর্যায়ের মুদাল্লীসদের অনুরুপ।তাদের রেওয়াত সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হবে তাতে শ্রবণমূলক বর্ণনা থাকুক চায় না থাকুক(আত তাদলীস ওয়াল মুদাল্লীসুন-সাইয়েদ আব্দুল মাজেদ আল গাওরী/১০৭-৮ পৃ)।

    জামিয়া সালাফিয়া বেনারসের এক ফাতুয়ায় বলা হয়েছে – ان کی تدلیس مضر نہیں অর্থাৎ তাদের(দ্বীতীয় শ্রেণীর মুদাল্লীস)তাদলীস মূলক বয়ান দোষের নয় (জামিয়া সালাফিয়া বেনারস মারকাজী দারুল উলুম-জানাযার স্বলাতে এক সালাম নাকি দু সালাম শীর্ষক ফাতুয়া)।

    তাছাড়া এর সমর্থনে  মুতাবায়াত হাদীস রয়েছে।যা হাদীসের মধ্যে কিয়দ দোষ ত্রুটি থাকলে তা দুরভীত করবে।

    যেমনটি ইমাম ইবনু যানযাবী ‘আমওয়াল”এ রেওয়াত করেছেন-
    ثنا محمد بن عمر الرومي، أنا زهير أبو خيثمة، عن أبي إسحاق الهمداني قال: «كانوا يعطون في صدقة الفطر بحساب ما يقوم من الورق». قلت: وإسناده حسن بمتابعة أبي أسامة عند ابن أبي شيبة.
    অর্থঃমুহাম্মাদ বিন উমার আর রূমী যুহাইর থেকে এবং যুহাইর আবু খুশায়মাহ খবর শুনিয়েছেন আবু ইসহাক আল হামদানী থেকে,আবু ইসহাক বলেন-“তারা সাদাকাতুল ফিতরা রূপ্য মুদ্রার হিসাবে যা ধার্য হত তাই প্রদান করতেন”(আমওয়াল-৩/১২৬৮,মুলতাকা আহলীল হাদীস-আল উমরী)।“

    হাদীসটির হুকুম

    বহুল সংখ্যক মুহাক্কীক এই হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত  করেছেন। যেমনটি আল্লামাহ হাম্মাদাহ আল উমরী মুলতাকা আহলীল হাদীসে এর সনদকে وإسناده صحيح অর্থাৎ এর সনদ সহীহ বলেছেন আবু আব্দুল্লাহ আল আসরী হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন(মুনতাদীল ইসলামী আল আমঃযাকাতুল ফিতিরে দিরহাম প্রদান সংক্রান্ত আলোচনা)।“

    আরশিফুল কসমীল ইসলামী আল আম” এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই হাদীসটিকে সহীহ বলা হয়েছে। আল্লামা আব্দুর রহামান আশ শাহীম হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন। ডঃ মুহীউদ্দীন আল কারাদাগীর মতে এটি সহীহ।আল্লামা কারযাবীর মতে এটি সহিহ।সুতরাং প্রমাণিত হল হাদীসটি মুত্তাসীল সহীহ।(মুলতাকা আহলীল হাদীসঃটাকা দ্বারা ফিতরা আদায় জায়েয অধ্যায়)।

    আবু ইসহাক আস সাবেঈ বর্ণিত টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়া সংক্রান্ত হাদীসটি মুলতঃ মুসান্নাফে আবী শায়বাহতে বর্ণিত হয়েছে।মুল হাদীসটি নিম্ন রূপ- 
    حدثنا أبوأسامة عن زهير قال: سمعت أبا إسحاق يقول: أدركتهم وهم يعطون في صدقة رمضان الدراهم بقيمة الطعام(المصنف لابن أبي شيبة-الكتب – المصنف – كتاب الزكاة – كتاب الزكاة/١٠٤٦٥)
    অর্থঃ আবূ ইসহাক (রহ.)  বর্ণনা করেন:-“আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (ইবনে আবি শায়বা-কিতাবুয যাকাত,২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১)। হাদীসটি আবু ইসহাক সুত্রে যুহাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে।হাদীসটির রিজাল বুখারী মুসলীমের শর্তে উন্নীত এবং এর প্রত্যেকটি রাবী সিকাহ রাবী।হাদীসটি মুত্তাসীল সহীহ।

    যুহাইর থেকে তাবেঈ অাবু ইসহাকের বর্ননা সহীহ ৷

    (দেখুন ইবনুল কাইয়ূমের রহ: তাহযিবুস সুনান ১/২৭৯পৃষ্ঠা এবং সিলসিলাতুস সহীহা ২০৫৫ নং হাদীসের আলোচনা)

    হাদীসের মুল রাবী হলেন আবু ইসহাক আমর ইবনু আব্দুল্লাহ বিন উবাইদ আস সাবেঈ আল কুফী আল-হামদানী রাহিমাহুল্লাহ।

    যিনি আবু ইসহাক আস সাবেঈ নামে প্রখ্যাত।

    আবু ইসহাক আস সাবেঈ কোনো মামুলি রাবী নন,বরং তিনি  প্রখ্যাত কুব্বার পর্যায়ের তাবেঈ এবং বুখারী মুসলীমের রাবী তথা অত্যন্ত বিশ্বস্ত বা সিকাহ পর্যায়ের রাবী।

    ইমাম আবু ইসহাক খালিফা উসমান(রাঃ) এর জামানায়  জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং ওফাত বরণ করেছেন ১২৭ হিজরিতে(কিতাবুস সিকাতঃইবনু হিব্বান-আবু ইসহাক আস সাবেঈ অধ্যায়,সিয়ারু আলামীন নুবালা-৫/৩৯৩পৃঃ)।

    তিনি অসংখ্য সাহাবীর সাক্ষাত লাভে ধন্য হয়েছিলেন।আবু ইসহাক ২১ জন সাহাবী থেকে হাদীস রেওয়াত করেছেন তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মুয়াবিয়া বিন আবী সুফিয়ান,আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস,আদী বিন হাতেম,বার’আ বিন আযেব,আব্দল্লাহ বিন আমার ইবনুল আস,উসামাহ বিন যায়েদ প্রমুখ।এছাড়া,তিনি আলী(রাঃ) এর সাক্ষাত লাভে ধন্য হয়েছিলেন। (তাবাকাতুল মুহাদ্দেসীন লি আসবাহানী,ইসতিগনা লি ইবনু  আব্দুল বার,সিয়ারু আলামীন নুবালা-৫/৩৯৩পৃঃ)।

    ইয়াহিয়া ইবনু মাঈন তাকে ثقة বলেছেন।ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের মতে তিনি ثقة صالح পর্যায়ের রাবী।ইমাম বায়হাকী তাকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতেম আর রাজীর মতে তিনি সিকাহ।আহমেদ বিন শুয়াঈব আন নাসাঈর মতে তিনি ثقة ।আহমেদ বিন স্বলেহ আজ-জিলী তাকে ثقة বলেছেন।ইমাম যাহাবীর মতে তিনি সিকাহ।(মাওসুয়াতুল হাদীস-মা’লুমাত আনীর রাবী-জারাহ অত তাদীলঃআবু ইসহাক আস সাবেঈ,সিয়ারু আলামীন নুবালা লিয যাহাবী)।

    আবুল হাসান আল ইজলী “আস সিকাত” গ্রন্থে ثقة তাকে বলেছেন।ইমাম যাহাবী বিশ্বস্ততার নিরিখে তাকে “هو ثقة حجة” আখ্যায়িত করেছেন”(সিয়ারু আলামীন নুবালা লিয যাহাবী)”।

    তাছাড়া তিনি আস্বহাবদের পরবর্তী যুগীয় ঐসকল ছয়জন সুপ্রসিদ্ধ প্রথম সারীর প্রধান  রাবীদের অন্তর্ভুক্ত যাদের মাধ্যমে হাদীস শাস্ত্রের বিপুল অংশ সংরক্ষিত হয়েছে।এই সম্পর্কে বুখারীর উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদানী বলেন-
    حفظ العلم على الأمة ستة : فلأهل الكوفة : أبو إسحاق والأعمش ، ولأهل البصرة : قتادة ويحيى بن أبي كثير . ولأهل المدينة : الزهري ، ولأهل مكة عمرو بن دينار  .
      
    অর্থঃ “উম্মাতের নিকটে ইলম সংরক্ষিত হয়েছে মুলত প্রধান ছয়জন রওয়াতীনের দ্বারা,তাঁরা হলেন-কুফার আবু ইসহাক ও আমাশ,বসরার কাতাদাহ ও ইয়াহিয়া ইবনু কাসীর ও মদিনার যুহাইর ও মাক্কাবাসীদের মধ্যে আমর বিন দিনার”(সিয়ারু আলামীন নুবালা,ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব-ফা/১৫৪০১৯,তাহযীবুল কামাল ফি আসমাউর রিজাল লি জামালুদ্দীন ইউসুফ-১১/৪২১পৃঃ,রিজালু সাহীহ মুসলীম লি আবী বকর আহামাদ বিন আলী আল ইসপাহানীঃতাহক্বীক মাহমুদ হাসান ইসমাইল-২০৭)।

    এদিক আবু ইসহাক আস সাবেঈ অত্যান্ত বিশুদ্ধ ও মাশহুর পর্যায়ের হুফফাজ তা প্রমাণিত হল।বিধায় অহেতুক তার উপর এজাতীয় অনুযোগ মূলক জারাহ পেশ করা ও তার আদলে তার রেওয়াত সমূহকে যঈফ প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা কস্মিনকালেও সঠিক বলে বিবেচিত নয়।

      

      আবূ ইসহাক আস সাবেঈর বার্ধক্যে  ইখতেলাত সঙ্ঘটিত হয়েছিল মন্তব্যটি সঠিক নয়।

    যে সকল মুহাদ্দেসীন আবু ইসহাক আস সাবেঈর বৃদ্ধকালে স্মৃতিজনিত ইখতিলাত হয়েছিল মর্মে অনুযোগ পেশ করেছেন তাঁরা মুলত শারিরীক দুর্বলতাকে ইখতিলাতের উপর কিয়াস করেছেন,যা কখনই সহীহ রূপে স্বীকৃত নয়।

    যেমনটি তারিখে মাদিনাতু দামেশক লি হাফিয আবীল কাশিম আলী ইবনুল হাসান,তারিখে ইবনু মাঈন আদ দুয়ারী,তারীখে ইয়াহিয়া ইবনু মুঈন প্রভৃতি গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে,

    ইবনু মাঈন বলেন-
    حميدا الرؤاسي قال إنما سمع سفيان بن عيينة من أبى إسحاق يعني بعدما اختلط لأن يوسف بن عمر طلبه، فذهب به بنوه إلى يوسف بن عمر إلى الحيرة فأحدث على السرج في الطريق فإنما سمع منه بعدما أحدث على السرج . (تاريخ مدينة دمشق: ابن عساكر-ج 46 – الصفحة 232/عمرو – عمير,تاريخ ابن معين، الدوري – يحيى بن معين – ج ١ – الصفحة ٢٧٣)

    অর্থঃ“হুমাইদ আর রুওয়াসী বলেন- ‘নিশ্চয় সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ আবু ইসহাক থেকে তাঁর ইখতেলাতের পরে শুনেছেন।এটা এজন্যে বলছি যে,একদা ইউনুস বিন উমার  আবু ইসহাককে তলব করলে আবু ইসহাক আল হেরাতে ইউসুফ বিন উমারের নিকট যাওয়ার মনস্থ করলেন এবং পথিমধ্যে তিনি (অর্থাৎ আবু ইসহাক)  অশ্বের উপরেই পায়খানা বা পেশাব করে দিলেন।আর তিনি(সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ) আবু ইসহাকের অশ্বের উপরে পায়খানা বা পেশাব করার ঘটনার পরে তাঁর থেকে হাদীস শুনেছেন”(তারিখে মাদিনাতে দামেশকঃইবনে আসাকীর-৪৬/২৩২পৃঃ ,তারিখে ইবনু মাঈন আদ দুয়ারী-১/২৭৩পৃঃ, তাহযীবুত তাহাযীবিল কামাল ফি আসমায়ীর রিজাল লি মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আয যাহাবীঃমাকতাবাতুল ইসলামীয়াহ প্রকাঃ২৮১৪পৃঃ)।

    এখানে স্পষ্টত ভাবে প্রকাশমান যে আবু ইসহাকের ইখতেলাতের প্রধান দলীল হিসাবে যে ঘটনা গৃহীত হয়েছে তা হল – “فأحدث على السرج ” বা অশ্বের উপর পেশাব-পায়খানা করা, যা বাস্তবে কোনো ভাবেই স্মৃতি বিভ্রাট জনীত প্রকৃত ইখতেলাত বিবেচিত হতে পারেনা।কেননা এটি মুলতঃ শারীরিক কমজোরীর প্রমাণ এর সাথে মতি-স্মৃতির বিভ্রাট কস্মিনকালেও সম্পৃক্ত নয়-এটা যে কোনো বিজ্ঞান বিষয়ক ছাত্রেরই জানা।আর নিছক জামহুরের দোহাই দিয়েও এই দালীলের নিরিখে আবু ইসহাককে মুখতালিত সাবেত করা কস্মিনকালেও হক হিসাবে প্রতিপন্ন হতে পারেনা।

    এজন্যেই ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
    هو ثقة حجة بلا نزاع وقد كبر وتغير حفظه تغير السن ولم يختلط
    অর্থঃ“তিনি দালীলের ক্ষেত্রে সিকাহ এতে কোনোই মতবিরোধ নেই, এবং তিনি যখন বৃদ্ধ হয়ে গেছিলেন তখন  তার কথা ও হিফয পরিবর্তিত হয়েছিল তবে তার ইখতেলাত তা স্মৃতিবিভ্রাট কক্ষনোই সঙ্ঘটিত হয়নি(সিয়ারু আলামীন নুবাল-ইমাম হাফিয যাহাবী)”।

    অনেকে বলে থাকেন “ইমাম যাহাবী মুতাআখখেরিন।আর তিনি একক ভাবে আবু ইসহাকের ইখতিলাতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন”।এটা জাহালাত পূর্ণ কথা। কেননা এক্ষেত্রে ইমাম যাহাবী একক নন।বহুল সংখ্যক মুতাকাদ্দেমীন ও মুতাআখখেরীন আবু ইসহাক আস সাবেঈর ইখতেলাত হবার বিষয়টিকে ইনকার করেছেন।

    যেমনটি  ইমাম ইবনু মাঈন রাহিমাহুল্লাহও তাঁকে প্রকৃত মুখাতালিত গণ্য করেননি,যে কারণেই আবু ইসহাকের মুখতালিত হবার বিষয়ে রুওয়াসীর কওল বয়ান করার পর, নিজ অভিমত পেশের বেলায় তিনি মন্তব্য করেছেন- “كأن أبا إسحاق شبيه بالمختلط” “অর্থাৎ তিনি মুখতালিতের অনুরূপ(প্রকৃত মুখতালিত নন)”(তারিখে ইবনু মাঈন-১/২৭৩পৃঃ)।

    মুহাদ্দিসদের অনেকেই আবু ইসহাকের ইখতিলাতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

    যেমনটি “তাহরীর তাকরীবুত তাহযীব লি হাফিয আহমাদ বিন আলী ইবনু হাজার আসকালানী” প্রন্থের ৩ খন্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় ডঃ বাসসার আওয়াদ মা’রুফ  বলেন-
    قوله 😦 اختلط بأخرة ) ليس بجيد ، فإنه لم يختلط ، لكنه شاخ ونسي  ،( تحرير تقريب التهذيب- الدكتور بشار عواد/ 3: 99 )
    অর্থঃ “তাঁর (আবু ইসহাকের) বার্ধক্যে ইখতিলাত হয়েছিল কথাটি উত্তম নয়।বরং নিশ্চিত কথন হল এটাই যে তাঁর ইখতিলাত হয়নি।তবে তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছিলেন এবং তাঁর কিছু বিস্মৃতি ঘটেছিল।(তাহরীর তাকরীবুত তাহযীব-তাহকীক-বাসসার ও আরনাউত-৩/৯৯পৃঃ)”।

    অপরদিকে কিছু সংখ্যক মুতাকাদ্দেমীন বলেছেন যুহাইর আবু ইসহাক থেকে ইসরাইলের পরে শুনেছেন। যেমনটি আবু হাতেম বলেছেন(তানবীহুল হা-জিদি ইলা মা ওয়াকা’আ মিনান নাযারী ফী কুতুবিল আমা-জিদ-৩/২৬৬ পৃ)।শারাহ সুনানুন নাসাঈতে(১/৬২৩পৃষ্ঠাতে) আলী বিন আদামও অনুরূপ কথা বলেছেন

    অথচ ইমাম বুখারী ও মুসলীম ইসরাইলের পাশাপাশি যুহাইর থেকেও অসংখ্য হাদীস আনায়ন করেছেন।যার দ্বারা এটা সাবেত হয় যে ইমাম বুখারী ও মুসলিমের নিকট আবু ইসহাকের ইখতিলাতের বিষয়টি অস্বীকৃত ছিল।এজন্যেই ‘মাজলিসুল হাদীস ওয়া উলুমিহী’ গ্রন্থে বলা হয়েছে –
    و ان كان وجوده في البخاري يغني عن البحث فيه بل هو دليل على أن ابا اسحاق لم يختلط و الله أعلم.(مجلس الحديث وعلومه -هل فعلا اختلط ابو اسحاق السبيعي)

    অর্থঃ সহীহ বুখারীতে এই ধরনের হাদীসের উপস্থিতি এটার প্রমাণ যে আবু ইসহাকের ইখতিলাত হয়নি। আল্লাহ আলাম। (মাজলিসুল হাদীস ওয়া উলুমিহীঃআবু ইসহাকের কি ইখতেলাত সঙ্ঘটিত হয়েছিল অধ্যায়)।

    আবু স্বহিব আসিম আল আগবারি আল ইয়ামিনী বলেনঃ
    أنكر بعض المحدثين اختلاط أبي إسحاق
    অর্থঃআবু ইসহাকের ইখতিলাতের বিষয়টি অনেক মুহাদ্দীস অস্বীকার করেছেন( সাবাকাতুল ইমাম আল আজুরী)।

    ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় “তাযকেরাতুল হুফফায” গ্রন্থে যুহাইরের জিবনী পরিচ্ছদে ‘আবু ইসহাকের ইখতিলাত ও ইখতিলাতের পরে যুহাইরের শোনার” উপর কৃত এই জাতীয় যাবতীয় জারাহ সমূহকে শক্তভাবে রদ করেছেন এবং বলেছেন –

    وقال أبو زرعة : سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط ، وهو ثقة، قلت: ما اختلط أبو إسحاق أبدا وإنما يعني بذلك التغير ، ونقص الحفظ . (تذكرة الحفاظ- إمام الذهبي, في ترجمة زهير بن معاوية-1/233)

    অর্থঃ “আবু জুর’আ বলেন (যুহাইর) ইখতিলাতের পরে আবু ইসহাকের থেকে শুনেছেন এবং তিনি(যুহাইর) সিকাহ।আমি বলছিঃআবু ইসহাকের কোনো কালেই ইখতিলাত হয়নি………”(তাযকিরাতুল হুফফাযঃযুহাইরের জিবনী-১/২৩৩পৃ)”।

    এই বিষয়ে উত্থাপিত যাবতীয় সংশয়ের নিরসনে ইমাম স্বলেহ উদ্দীন আল আলায়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন –

    ولم يعتبر أحد من الأئمة ما ذكر من اختلاط أبي إسحاق ، احتجوا به مطلقاً ، وذلك يدل على أنه لم يختلط في شيء من حديثه.(المختلطين مع زيادات البوصيري-صلاح الدين العلائي)

    অর্থঃ “ইখতিলাত বিষয়ক যা কীছু আবী ইসহাকের বিষয়ে উদ্ধৃত হয়েছে আইম্মার কেউই সে বিষয়টি ধর্তব্যে আনেন নি।বরঞ্চ মুতলাক্ব বা শর্তহীন ভাবে গ্রহণযোগ্য রূপে তাঁর থেকে হাদীস স্বীকৃত হয়েছে।এর থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে কোনো হাদিসের ক্ষেত্রেই তিনি ইখতিলাতের স্বীকার হননি”(মুখতালাতীন মাআ যায়াদাতীল বুসিরী- আলায়ী,মুখতালাতু-নঃ৯৪পৃ,মুলতাকা আহলীল হাদীস-ইখতেলাতে আবু ইসহাক আস সাবেঈ)।

    দ্বীতিয়ত, আবু ইসহাকের উপর মুখতালিতের হুকুম প্রযোজ্য হবেনা। কেননা যারা আবু ইসহাককে মুখতালিত গণ্য করেছেন, তাদের নিকটেও তিনি মুখতালিতে ফাহেশ ছিলেন না।
    এই প্রসঙ্গে আল্লামা মুহাম্মাদ বিন স্বলেহ আল মুনাজ্জিদ বলেন –

    ولم يأخذ عليه العلماء اضطرابا أو اختلاطا فاحشا ( الإسلام سؤال وجواب/ترجمة مختصرة لأبي إسحاق السبيعي)

    অর্থঃ উলামাগন তাকে উন্মাদ বা মুখতালিতে ফাহেশ গণ্য করেননি।(ইসলাম সাওয়াল জওয়াব –ফাতুয়া নং ১৫৪০১৯)।

    শাইখ হাতেম বিন আ’রীফ আশ শারীফ “আত তাখরীজ আদ দারাসাতুল আসানীদ” গ্রন্থে আবু ইসহাকের ইখতেলাত সংক্রান্ত উভয় মুখী মন্তব্যকে বিস্তারিত ভাবে আলোকপাত করার পরে সিদ্ধান্ত স্বরূপ উল্লেখ করেছেন – 
    فبيّن أن اختلاطه يسير ؛ لكبر السن ، وليس اختلاطاً فاحشاً .
    অর্থঃ এটা স্পস্ট যে তার যে ইখতিলাত হয়েছিল তা ছিল বার্ধক্যের কারণে সঙ্ঘটিত সাধারণ পর্যায়ের ইখতেলাত ।তা কোনো ভাবেই এখতেলাতে ফাহেশ নয়(“আত তাখরীজ আদ দারাসাতুল আসানীদ-শাইখ আশ শারীফ ১/৮৫, মুলতাকা আহলীল হাদীস-২৮১৯৬১)।

    এদিক থেকে যারা আবু ইসহাকের বিষয়ে মুহাদ্দিসদের আরোপিত اختلط بأخرة মর্মে মন্তব্য দেখেই আবু ইসহাকের হাদীসের উপরে হুকুম জারী করে বসে যে, “আবু ইসহাক বার্ধক্যে মুখতালিতের স্বীকার হয়েছিলেন বিধায় আম উসুল অনুযায়ী তার ইখতেলাত পরবর্তী সমস্ত হাদীস পরিত্যাজ্য”।তারা আদৌতেও অজ্ঞ।কেননা প্রত্যেক পর্যায়ের মুখতালিতের বাদাল ইখতেলাত হাদীস পরিত্যাজ্য নয়।

    মুখতালিত মাত্রই হাদীস পরিত্যাগের  এই পদ্ধতি হাদীসকে ক্ষতবিক্ষত করার নামান্তর। এই সম্পর্কে জামিয়া সালাফিয়ার দারুল ইফতার পক্ষ থেকে একটি অভূতপূর্ব মন্তব্য পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে –
    امام ہیثمی کے اصول کی بنیاد پر اگر ہر مختلط روایت رد کر دی جائے تو حدیث کا ایک بڑا ذخیرہ رد کرنا لازم آئے گا.
    অর্থঃযদি ইমাম হাইছামীর উসুল মোতাবেক প্রত্যেক মুখতালিতের হাদীসকে রদ করে দেওয়া হয় তবে হাদীস ভান্ডারের একটা বিরাট অংশ পরিত্যাজ্য বলে গণ্য করা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়াবে(যা সমীচীন নয়(দারুল ইফতা জামিয়া সালাফিয়া বেনারস)।

    বাস্তবে মুদাল্লীস রাবীদের ন্যায় মুখতালিতেরও বিশেষ কয়েকটি প্রকরণ রয়েছে  এবং প্রকরণ অনুযায়ী হাদীস  গৃহীত ও পরিত্যাজ্য বলে বিবেচিত হয়।হাফিজ আলায়ী রাহিমাহুল্লাহ ‘কিতাবুল মুখতালাতীন’ গ্রন্থে এই বিষয়ে বিষদ বায়ান করেছেন(মুখতালাতীনঃ ১/৩-৪পৃ)।

    আর হাদীসের উসুল বিদগন এই উসুল বায়ান করেছেন যে তাবাকাত অনুযায়ী মুখতালিতের হাদীস যেমন কিয়দ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত হয় ঠিক একানুরূপ ভাবে যাদের এখতিলাত ফাহেশ পর্যায়ের নয় বরং নিছক ইখতেলাতে খাফি পর্যায়ের তাদের ইখতেলাত পরবর্তী হাদীস নিঃসন্দিগ্ধ ভাবে কাবিলে এহতেজাজ।

    জামিয়া সালাফিয়া বেনারসের মারকাজী দারুল উলুম দারুল ইফতার পক্ষ থেকে প্রকাশিত “জানাজার স্বলাতে এক সালাম নাকি দুই সালাম” শীর্ষক ফাতুয়ায় এই সংক্রান্ত বিষদ উসুলের বয়ান  করার পর বলা হয়েছে-
    اس تفصیل سے معلوم ہوا کہ ہر مختلط کی روایت قابل رد نہیں……….معمولی اختلاط کو اہل علم واصول نے قابل اعتناء نہیں سمجھا بلکہ یہ اصول مقرر کیا کہ جن کی تخلیط معمولی ہوگی ان کی روایت قبول کی جائے گی اور جن کی تخلیط بہت زیادہ ہوگی ان کی روایت قبول نہیں کی جائے گی اور جن کی تخلیط درمیانی ہوگی اور ان کی ر وایت میں ثقات کی مخالفت نہ ہوگی ان کی روایت قبول کی جائے گی۔

    অর্থঃএই বিস্তারিত বয়ান থেকে সুস্পষ্ট হয় যে প্রত্যেক মুখতালিতের (ইখতেলাত পরবর্তী) রেওয়াত অগ্রহণযোগ্য নয়। মামুলী ইখতেলাতকে আহলে ইলম ও উসুলগন সাধারন ভাবে ধর্তব্যে আনেন নি। বরং তারা একটা উসুলের বয়ান করেছেন যে- যাদের এখতিলাত মামুলী সাবেত হবে তাদের  রেওয়াত গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। আর যাদের এখতিলাত খুব বেশি(ইখতেলাতে ফাহেশ) তাদের রেওয়াত পরিতাজ্য বলে বিবেচিত হবে।যার যাদের অবস্থান এই দুয়ের মাঝে হবে তাদের যে সকল রেওয়াত সিকাতের মুখালিফাত হবেনা সেগুলি গ্রহণ করা হবে(জামিয়া সালাফিয়া বেনারস দারুল ইফতা ফাতুয়া/৪৩)।

    আর ইতিপূর্বেই মুনাজ্জিদ , শাইখ হাতেম  প্রমুখের মন্তব্য থেকে এটা উল্লেখিত হয়েছে যে যারা তাকে মুখতালিত গণ্য করেছেন তাদেরও প্রসিদ্ধ মতে  নিকট আবু ইসহাকের ইখতিলাত ইখতিলাতে ফাহেশ পর্যায়ের ছিল না বরং উলামাদের নিকট তা ছিল মামুলী ইখতেলাত ।

    তৃতীয়তঃ ‘আবু ইসহাক আস সাবেঈর বার্ধক্যে ইখতিলাত হয়েছিল’ এই মর্মে বর্ণিত কাওল সমূহকে মান্যতা দেওয়া হলেও যুহাইর যে তার থেকে ইখতিলাতের পরে শুনেছেন এটা দলিল সিদ্ধ রূপে প্রমাণিত হয়না বরং বাস্তব এর বিপরীত সাব্যস্ত হয়।

    জমহুর মুতাকাদ্দেমীন এটার স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছেন যে ইসরাইল বিন ইউনুস আবু ইসহাক থেকে শোনার বিষয়ে পূর্ববর্তী বিদ্বজনদের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ ইসরাইল প্রাথমিক স্তরের শ্রোতা বা কাদীমুস সিমা’ এর অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাদীস সহীহ। যেমনটি আবু হাতেম বলেন- وإسرائيل سماعه من أبي إسحاق قديم অর্থঃ-“ইসরাইলের আবু ইসহাক থেকে শোনার ব্যাপারে কাদীম”(তামবীহুল হা-জিদি ইলা মা ওয়াকা’আ মিনান নাযারী ফী কুতুবিল আমা-জিদ -আবু ইসহাক আল হুয়াইনী-৩/২৬৬ পৃ,শারাহ সুনানুন নাসাঈ লি আলী বিন আদাম-১/৬২৩)। “

    ইলালুত তিরমিযী আল কুবরা” তেও অনুরূপ বলা হয়েছে। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী ইসরাইলের রেওয়াত প্রসঙ্গে বলেন-
    وأصح شيء في هذا عندي حديث إسرائيل وقيس عن أبي إسحق
    অর্থঃ-আমার নিকট আবু ইসহাক থেকে ইসরাইল ও কায়েসের রেওয়াত সবচাইতে সহীহ(সুনানুত তিরমিযী-কিতাবুত ত্বহারাত)।

    আব্দুর রহামান মুবারকপুরী স্বীয় ‘তুহফা’তে বলেন- أن سماع إسرائيل من أبي إسحاق ليس في آخر عمره  অর্থঃ নিশ্চয় আবু ইসহাক থেকে ইসরাইলের শোনার বিষয়টি তার বার্ধক্যে সঙ্ঘটিত হয়নি(অর্থাৎ-ইসরাইল কাদীমুস সিমা’)(তুহফাতুল আহওয়াজী-কিতাবুত ত্বহারাত-১/৬৮ পৃঃ)।

    সুতারাং প্রমাণিত যে ইসরাইল বিন ইউনুস কাদীমুস সিমা’ এর অন্তর্ভুক্ত।অথচ ইসরাইল জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১০০ হিজরীতে ওফাত বরণ করেছিলেন ১৬২ হিজরিতে।

    এই প্রসঙ্গে  ইমাম যাহাবী বলেন-  أن مولد إسرائيل سنة مائة অর্থঃ- ‘ইসরাইলের জন্ম সন হল একশ হিজরী’(সিয়ারু আলামীন নুবাল-ইসরাইল অধায়-৭/৩৫৬পৃঃ)। অন্যদিকে যুহাইর জন্মগ্রহণ প্রসঙ্গে ইমাম যাহাবী বলেন- مَوْلِدِهِ: فِي خَمْسٍ وَتِسْعِيْنَ. وَسَنَةُ অর্থাৎ “তার জন্ম হয়েছিল ৯৫ হিজরীতে ওফাত ১৭৩ হিজরিতে”(সিয়ারু আলামীন নুবাল-যুহাইর বিন মুয়াবিয়া)।

    এখন প্রশ্ন হল- এটা কিভাবে বাস্তব সম্মত হতে পারে যে ১২৭ হিজরিতে ওফাত প্রাপ্ত তাবেঈ আবু ইসহাক সাবেঈর হাদীস শুনার বিষয়ে ইসরাইল ১০০ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করে কাদীমসু সিমা’ সাব্যস্ত হবে অথচ যুহাইর ৯৫ হিজরিতে জন্মলাভ করেও আখিরুস সিমা’ প্রতিপন্ন হবে?

    অন্যদিকে জমহুর মুহাদ্দীসগনও আবু ইসহাক থেকে যুহাইর ও ইসরাইলের রেওয়াত প্রসঙ্গে বিশেষ কোন তফাৎ অঙ্কন করেননি। উপরন্ত মুহাদ্দেসীনদের কাওল ও উদ্ধৃতি থেকে তো এটাই সাবেত হয় যে যুহাইর আবু ইসহাকের রেওয়াতে ইসরাইলের ন্যায় অন্যান্য উৎকৃষ্ট রাবীদের ন্যায় একজন অধিক প্রাধান্য যোগ্য রাবী ও প্রাথমিক স্তরের রাবীদের অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি বর্ণিত রয়েছে-

    قال الآجري : سألت أبا داود عن زهير وإسرائيل في أبي إسحاق فقال : زهير فوق إسرائيل بكثير

    অর্থঃআজরী বলেন- আমি আবু দাউদকে আবু ইসহাক থেকে ইসরাইল ও যুহাইরের রেওয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম।তিনি বললেন যুহাইর ইসরাইলের থেকে অধিক প্রাধান্যযোগ্য(তুহফাতুল আহওয়াজী-১/৬৮পৃ)।
    অন্য রেওয়াতে রয়েছে-كثير فوق إسرائيل بكثير  زهير (সুয়ালাতুল আজরী লি আবী দাউদ-২/২২৪)।অথচ আবূ দাউদ নিজেও ধারণা করতেন যে শেষ বয়সে আবু ইসহাকের ইখতেলাত হয়েছিল( সাওয়ালাত আবী উবাইদিল্লাহ আল আজুরী আবা দাউদ ফিল জারাহী অত তাদীল-১/১০৬)। সুতরাং আবু দাউদের কওলের সামঞ্জস্য থেকে এটা সুস্পষ্ট যে যুহাইর কাদীমুস সিমা ছিলেন। ইমাম তিরমিযি বলেন-
    سألت عبد الله بن عبد الرحمن أي الروايات في هذا الحديث عن أبي إسحاق أصح فلم يقض فيه بشيء

    অর্থঃ“আমি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহামান দারেমীকে আবু ইসহাক বর্ণিত এই সকল রেওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।তিনি কোন উত্তর দেননি”(সুনানে তিরমিযীঃকিতাবুত ত্বহারাত-দুই ঢেলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার অধ্যায়,শারাহ সুনানুন নাসাঈ লি আলী বিন আদাম বিন মুসা আল আসওয়াবী -১/৬২৩পৃঃ)।

    দুয়ারী থেকে কাওল বর্ণিত রয়েছে যে-

    وقال الدوري قيل ليحيى بن معين: زهير وإسرائيل أيهما أثبت في أبي إسحاق قال: كلاهما قريب.(سؤالات الآجري لأبي داود -٢ /٢٢٤ ,الجرح-٣ /٥٨٩,منهج الإمام أبي عبد الرحمن النسائي في الجرح والتعديل- ٨٧٠)

    অর্থঃ“দুয়ারী বলেনঃআমি ইয়াহিয়া ইবনু মাঈনকে জিজ্ঞেস করলাম যুহাইর ও ইসরাইল এই দুজনের মধ্যে আবু ইসহাকের হাদীসের বিষয়ে কে অধিক পোক্তা?ইবনু মাঈন জাওয়াব দিলেন দুজনেই নিকটবর্তী”(সুয়ালাতুল আজরী লি আবী দাউদ-২/২২৪,আয যারাহ অত তাদীল-৩/৫৮৯,মানহাজুল ইমাম আবী আব্দুর রহমান আন নাসাঈ ফিয যারাহী অত তাদীল-৭৮০)”।

    অন্য রেওয়াতে বর্ণিত রয়েছে আল বাদী বলেন ইয়াহিয়া ইবনু মাঈন বলেছেন- 

    زهير، وإسرائيل، وشريك، وأبو عوانة هؤلاء الأربعة في أبي إسحاق: واحد،(منهج الإمام النسائي في الجرح والتعديل -٨٧٠)
    অর্থঃ “যুহাইর ইসরাইল,শারীক ও আবু আওনাহ এই চারজন আবী ইসহাকের রেওয়াতে একক অনুরূপ”( মিন কালামী আবী জাকারিয়া ইয়াহিয়া ইবনু মাঈন ফির রিজাল- তাহকিক আহমদ মুহাম্মাদ নুর সাঈফ-৫৫পৃঃ,মানহাজুল ইমাম আবী আব্দুর রহমান আন নাসাঈ ফিয যারাহী অত তাদীলঃডঃ কাসেম আলী সায়াদ-৭৮০)”।

    এই সকল বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট রূপে প্রতিভাত হয় উল্লেখিত ইমামগনের নিকটে আবু ইসহাক থেকে ইসরাইলের চাইতে যুহাইর বেশি প্রনিপ্রাধান্যযোগ্য কিংবা সমপর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত ছিল। এহেতু ইসরাইল কাদীমুস  সাব্যস্ত হলে এই কথন কিভাবে বাস্তব সম্মত হতে পারে যে,যুহাইর আখিরুস সিমা’ বা তার সিমা’ বা’দাল ইখতেলাত?

    চতুর্থতঃ“আবু ইসহাক থেকে যুহাইর” সনদটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে উন্নীত।

    সহীহুল বুখারী-
    ৪০,,১৫৬,,২৫২,,২৫৪,,১০২২,,১৬৭৫,,২৯৩০,,৩০৩৯,,৩৫৫২,,৩৯৫৭,,৩৯৬০,,৩৯৮৬,,৪০৬৭,,৪১৫১,,৪৪০৪,,৪৪৮৬,,৪৫৬১,,৪৮৭১,,৫০১১ ইত্যাদি ইত্যাদি হাদীসে যুহাইর রহ: তাবেঈ আবু ইসহাক রহঃ থেকে হাদীস বর্ননা করেছেন ৷৷

    যুহাইর বিন মুয়াবিয়াহ সিকাহ রাবী।ইমাম আবু বকর আল বাজ্জার তাঁকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতেম আর রাযী তাঁকে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী বলেছেন।আহামদ বিন শুয়াঈব আন নাসাঈ

  • তাদের আসল টার্গেট কী⁉️

    কারো সাথে দুশমনি না,সবাই একটু ভেবে দেখবেন,একটুখানি ভাবুন।(আর হিদায়তী দোয়া করুন)

    আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থি বক্তব্য
    # বিতের নামাজ নফল। না পড়লে কোন গুনাহ হবে না
    নাউজুবিল্লাহ।
    youtu.be/ItI1EE5-Gdg

    # মায়ের বুকে যতদিন দুধ আছে বাচ্চা ততদিন দুধ খাবে। নাউজুবিল্লাহ‌
    youtu.be/EfrHKeLOt5Y

    # কুরবানী নফল  কোটিপতি কুরবানী  না করলেও  গুনাহ হবে না নাউজুবিল্লাহ।
    youtu.be/mW9tpos-4zE

    # হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বিদআত করেছেন
    নাউজুবিল্লাহ।
    youtu.be/r-jQlz9Ga3w

    # তারাবীতে কোরআন খতম করা বিদআত নাউজুবিল্লাহ, youtu.be/ev4CJ0lRVZ8

    # গরিব মানুষ বড় মাছ কিনলে জাহান্নামি হবে।
    নাউজুবিল্লাহ।
    youtu.be/Tr2rbWjmimY

    # কাবা শরীফ হিন্দুদের টাকায় নির্মিত।
    নাউজুবিল্লাহ।
    youtu.be/8kMAGNUqyEQ

    # হানাফীদের মসজিদে ফজরের নামাজ ও আসরের নামাজ হবে না নাউজুবিল্লাহ।
    youtu.be/jcO-YHeSt_M
    এজন্য তার অন্ধ ভক্ত মুরিদরা আমাদের মসজিদে ফজর এবং আসরের নামাজ পড়তে আসে না।

    # সুর দিয়ে ওয়াজ করা হারাম
    youtu.be/MrrQE5lyWdk,
    সে নিজেও এক সময় সুর দেওয়ার চেষ্টা করত কিন্তু তার কন্ঠ এতটাই বিশ্রী যে সুর দিলে প্রচন্ড বেমানান হয়।

    # বাপের বাড়িতে মেয়ে তিন দিনের বেশি থাকলে
    স্বামীকে খরচ দিতে হবে।
    (youtu.be/kyLRKqmA7iM)

    #২০ রাকাত তারাবি নাকি বিদআত,নাউজুবিল্লাহ অথচ তারাবির নামাজ ২০ রাকাত সুন্নত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম  পড়েছেন সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাত পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরামের আমলে  ২০ রাকাত জামাতের সাথে চূড়ান্তভাবে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

    # কোমল পানীয় মদ (নাউজুবিল্লাহ)
    কোন হালাল বস্তুকে মনগড়াভাবে হারাম করার সুযোগ নেই।(youtu.be/_ttL_zJ5–s)

    # মাযহাব মানা হারাম ও শিরিক।
    (youtu.be/rSuXYY8Vgas)

    # কোরআন শরীফ অশুদ্ধ পড়লেও নামাজের সমস্যা হবে না কারন সে নিজেই কুরআন শরীফ পড়তে পারে না ‌(youtu.be/hkoRWzMxhT8)

    # চরম অহংকারী সে তার প্রতিপক্ষকে বলে তোমাকে আমি মানুষই মনে করি না, নাউজুবিল্লাহ।
    # এক বালতি গরুর পেশাবে কাপড় ভিজিয়ে নামাজ পড়া যাবে  নাউজুবিল্লাহ
    (youtu.be/NVtIJMvfIAI)

    মতের বিরুদ্ধে গেলেই কি
    তাকে মানুষ বলতে হবে?
    এছাড়াও বহু কোরআন সুন্নাহ পরিপন্থী ফতোয়া দিয়ে সব সময় মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
    তার মূল কাজ মানুষের মধ্যে ফাটল তৈরি করা

  • যয়ীফ হাদীসকে প্রায় সকল মুহাদ্দিসই শর্ত সাপেক্ষে ফযিলতের ক্ষেত্রে, ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে ও রিকাক বা চিত্র্তবিগলনমূলক হাদীসের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করেছেন। আর আহকাম বা বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণ যয়ীফকে দুভাগে ভাগ করেছেন।

    এক. এমন যয়ীফ হাদীস, যার সমর্থনে কোন শরয়ী দলিল নেই, বরং এর বক্তব্য শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। এ ধরণের যয়ীফ আমলযোগ্য নয়।

    দুই. সনদের বিবেচনায় হাদীসটি যয়ীফ বটে, তবে এর সমর্থনে শরয়ী দলিল প্রমাণ আছে, সাহাবী ও তাবেয়ীগণের যুগ থেকে এ হাদীস অনুসারে আমল চলে আসছে। এমন যয়ীফ হাদীস শুধু আমলযোগ্যই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে তা মুতাওয়াতির বা অসংখ্য সূত্র্রে বর্ণিত হাদীসের সমপর্যায়ের। ‘আল আজবিবাতুল ফাযিলা’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ র. এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।

    হাফেজ ইবনুল কায়্যিম র. তার ‘কিতাবুর রূহ’ গ্রন্থে একটি যয়ীফ হাদীস সম্পর্কে বলেছেন,

    فهذا الحديث وإن لم يثبت فاتصال العمل به في سائر الأمصار والأعصار من غير إنكار كاف في العمل به

    অর্থাৎ এ হাদীসটি প্রমাণিত না হলেও বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন শহরে কোন রূপ আপত্তি ছাড়া এ অনুযায়ী আমল চালু থাকাই হাদীসটি আমলযোগ্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (দ, পৃ, ১৬)

    ইমাম যারকাশী র. তাঁর হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি বিষয়ক গ্রন্থ ‘আন নুকাত’ এ বলেছেন,

    إن الحديث الضعيف إذا تلقته الأمة بالقبول عمل به على الصحيح حتى ينزل منزلة المتواتر

    অর্থাৎ যয়ীফ হাদীসকে যখন উম্মাহ ব্যাপকভাবে গ্রহন করে নেয়, তখন সঠিক মতানুসারে সেই হাদীসটি আমলযোগ্য হয়, এমনকি তা মুতাওয়াতির হাদীসের মানে পৌঁছে যায়। (দ, ১খ, ৩৯০ পৃ)

    হাফেজ শামসুদ্দীন সাখাবী তাঁর ‘ফাতহুল মুগীছ’ গ্রন্থে লিখেছেন,

    وكذا إذا تلقت الأمة الضعيف بالقبول يعمل به على الصحيح حتى أنه ينزل منزلة المتواتر في أنه ينسخ المقطوع به ولهذا قال الشافعي رحمه الله في حديث لا وصية لوارث إنه لا يثبته أهل الحديث ولكن العامة تلقته بالقبول وعملوا به حتى جعلوه ناسخا لآية الوصية.

    অর্থাৎ উম্মাহ যখন  যয়ীফ হাদীসকে ব্যাপক হারে গ্রহণ করে নেয়,  তখন সহীহ মত অনুসারে সেটি আমলযোগ্য হয়, এমনকি তার দ্বারা অকাট্য বিধান রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে সেটি মুতাওয়াতির দলিলের সমপর্যায়ের হয়। এ কারণেই ইমাম শাফেয়ী র. ‘উত্তরাধিকারীর জন্য কোন ওসিয়ত নেই’ হাদীসটি সম্পর্কে বলেছেন, হাদীস বিশারদগণ এটিকে সুপ্রমাণিত মনে না করলেও ব্যাপকহারে আলেমগণ এটি গ্রহণ করে নিয়েছেন, এ অনুযায়ী আমল করেছেন, এমনকি তারা এটিকে ওসিয়ত সম্পর্কিত আয়াতটির বিধান রহিতকারী সাব্যস্ত করেছেন। (দ,১খ, ৩৩৩পৃ)

    আমাদের আলোচ্য হাদীসটি এই দ্বিতীয় পকার যয়ীফের অন্তর্ভূক্ত। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত উম্মাহর ধারাবাহিক ও অবিচ্ছিন্ন আমল এ অনুযায়ী চলে আসছে। সুত্ররাং উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে এটি অবশ্যই আমলযোগ্য বলে গণ্য হবে। এটিকে জাল আখ্যায়িত করা হাদীস শাস্ত্রের স্বীকৃত মূলনীতি উপেক্ষা করারই নামান্তর।

    মওকুফ হাদীস
    ১. হযরত উমর রা. এর কর্মপন্থা

    হযরত উমর রা.এর উদ্যোগে ২০ রাকাত তারাবী’র ব্যবস্থা সম্পর্কে মোট সাতটি বর্ণনা পাওয়া গেছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

    ক. ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফার বর্ণনা

    ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা বর্ণনা করেন:

    عن السائب بن يزيد قال: كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطاب في شهر رمضان بعشرين ركعة
    অর্থ: হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রা. বলেছেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর আমলে সাহাবায়ে কেরাম রমযান মাসে বিশ রাকাত পড়তেন। (বায়হাকী , আসসুনানুল কুবরা ২/৪৯৬)

    এ হাদীসের দুটি সনদ :

    ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফার নীচে বায়হাকী পর্যন্ত এই হাদীসের দুটি সনদ আছে। একটি সনদ ইমাম বায়হাকী তার ‘আসসুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এই সনদে ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফার শিষ্য হলেন ইবনে আবূ যি’ব রহ.। 
    অপর সনদটি তিনি উল্লেখ করেছেন তার ‘আল-মারিফা’ গ্রন্থে। এই সনদে ইবনে খুসায়ফার শিষ্য হলেন মুহাম্মদ ইবনে জা’ফর। প্রথম সনদে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ইমাম নববী, ওয়ালিউদ্দীন ইরাকী, বদরুদ্দীন আয়নী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী ও আল্লামা নিমাভী র. প্রমুখ। আর দ্বিতীয় সনদে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন তাজুদ্দীন সুবকী ও মোল্লা আলী কারী প্রমুখ। তার মানে মূল হাদীসটি সাত জন বড় বড় মনীষীর দৃষ্টিতে সহীহ। (দ, রাকাতে তারাবী, পৃ. ৫৪)। মোবারকপুরী ও আলবানী সাহেবের পূর্বে কোন মনীষী এই হাদীসকে যয়ীফ বলেননি।

    প্রথম সনদটির পর্যালোচনা

    লা-মাযহাবী বন্ধুরা তাদের সহীহ বুখারীর টীকায় প্রথম সনদটির কথা উল্লেখই করেননি। অবশ্য লা-মাযহাবী আলেম মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী তার তিরমিযীর ভাষ্য তুহফাতুল আহওয়াযীতে ও মুযাফফর বিন মুহসিন তার তারাবীহ’র রাকআত সংখ্যা পুস্তকে উল্লেখ করেছেন। মুযাফফর বিন মুহসিন লিখেছেন, বর্ণনাটি জাল। এটি তিন দোষে দুষ্ট। প্রথমত, এর সনদে আবূ আব্দুল্লাহ ইবনে ফানজুবী আদ-দায় নূরী নামক রাবী আছে। সে মুহাদ্দিসগণের নিকট অপরিচিত্র। রিজাল শাস্ত্রে এর কোন অস্তিত্ব নেই। এজন্য শায়খ আব্দুর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) বলেন, لم أقف على ترجمته فمن يدعي صحة هذا الأثر فعليه أن يّثْبُتَ كونه ثقة قابلا للاحتجاج.  আমি তার জীবনী সম্পর্কে অবগত হতে পারিনি। সুত্ররাং যে ব্যক্তি এই আছারের বিশুদ্ধতা দাবী করবে তার উপর অপরিহার্য হবে নির্ভরযোগ্য হিসাবে দলীলের উপযুক্ততা প্রমাণ করা।

    যার কোন পরিচয়ই নেই তার বর্ণনা কিভাবে গ্রহণীয় হতে পারে? মুহাদ্দিসগণের নিকটে এরূপ বর্ণনা জাল বলে পরিচিত্র।

    দ্বিতীয়ত, উক্ত বর্ণনায় ইয়াযীদ ইবনু খুছায়ফাহ নামে একজন মুনকার রাবী আছে। সে ছহীহ হাদীছের বিরোধী হাদীছ বর্ণনাকারী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল এজন্য তাকে মুনকার বলেছেন এবং আল্লামা যাহাবী ও ইবনু হাজার আসক্বালানী তা সমর্থন করেছেন। তাছাড়া সে যে মুনকার রাবী তার প্রমাণ হ’ল, সায়েব ইবনু ইয়াযীদ থেকে সে এখানে ২০ রাকআতের কথা বর্ণনা করেছে। অথচ আমরা ৮ রাকআতের আলোচনায় সায়েব ইবনু ইয়াযীদ থেকে মোট ৪টি হাদীস উল্লেখ করেছি, যার সবগুলোই সহীহ। সুত্ররাং এই বর্ণনা কোনকমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
    তৃতীয়ত, এটি কখনো মুযত্বরাব পর্যায়ের। এই বর্ণনায় বিশ রাকআতের বর্ণনা এসেছে। কিন্তু অন্য বর্ণনায় ২১ রাকআতের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই শায়খ আলবানী বলেন, এটি মুযত্বারাব পর্যায়ের হওয়ায় পরিত্যাজ্য। (তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা)

    এ হলো লেখকের বাগাড়ম্বর। তার লেখার মৌলিক ত্রুটিগুলো তুলে ধরার পূর্বে কয়েকটি ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভুলের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

    ক. তিনি লিখেছেন, আদ-দায়নূরী। শুদ্ধ হলো আদ দীনাওয়ারী।

    খ. তিনি লিখেছেন, ইয়াযীদ ইবনু খুছায়ফাহ নামে একজন মুনকার রাবী আছে। এখানে মুনকার রাবী কথাটি ভুল। মুহাদ্দিসগণ রাবীর ক্ষেত্রে মুনকার (আপত্তিকর) শব্দটি ব্যবহার করেন না। করেন হাদীসের ক্ষেত্রে। হ্যাঁ, রাবীর ক্ষেত্রে ‘মুনকারুল হাদীস’ কথাটি তারা ব্যবহার করেন, যার অর্থ  হলো আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী। সুত্ররাং ইমাম আহমাদ তাকে মুনকার বলেছেন একথাটিও ভুল। আহমাদ রহ. বলেছেন, মুনকারুল হাদীস।

    গ. তিনি বলেছেন, মুযত্বারাব। শুদ্ধ হবে মুযতারিব।

    হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি বিষয়ে আনাড়ি হওয়ার কারণে এসব ভুল প্রকাশ পেয়েছে।

    এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। লেখক এ হাদীসটিকে জাল বলেছেন। শীর্ষ পাঁচজন মুহাদ্দিস যে হাদীসকে সহীহ বলেছেন, সেটাকে জাল বলে দেওয়া দুঃসাহসিকতা বৈ কি। আলবানী ও মুবারকপুরীও যে সাহস দেখাতে পারেন নি, সেই সাহস দেখিয়েছেন আমাদের দেশের এই কৃতিসন্তান। লেখক হাদীসটি জাল হওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হলো ফানজুবীর অপরিচিত্র হওয়া। লেখকের আলোচনা থেকে বোঝা যায় এটিই মূল কারণ। এর সমর্থনেই তিনি মুবারকপুরীর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু ঐ বক্তব্যের অনুবাদে ভুল করেছেন। ঐ বক্তব্যে ان يثبت শব্দটি তার লাগানো যের-যবরসহ উল্লেখ করেছি, যাতে পাঠক তার এলেমের দৌড় বুঝতে পারেন। বক্তব্যটির সঠিক অনুবাদ হবে, আমি তার জীবনী সম্পর্কে অবগত হতে পারি নি। সুত্ররাং যে ব্যক্তি এই আছারের বিশুদ্ধতা দাবী করবে তার উপর অপরিহার্য হবে তার (অর্থাৎ ফানজুবীর) বিশ্বস্ততা ও প্রমাণযোগ্য হওয়া প্রমাণ করা।

    মুবারকপুরী বলেছেন, অবগত হতে পারি নি। ব্যাস! এর উপর নির্ভর করেই লেখক বলে দিয়েছেন, সে মুহাদ্দিসগণের নিকট অপরিচিত্র। রিজাল শাস্ত্রে এর কোন অস্তিত্ব নেই।

    ফানজুবী কি অপরিচিত্র?

    ফানজুবী শুধু পরিচিত্রই নন, বরং বিখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন। ইমাম নাসাঈ রহ.এর বিশিষ্ট শিষ্য আবু বকর ইবনুস সুন্নী ছিলেন এই ফানজুবীর খাস উস্তাদ। ইবনুস সুন্নী সুনানে নাসাঈর রাবী। তার থেকেই সেটি বর্ণনা করেছেন ফানজুবী। ইমাম নাাসাঈ থেকে যেসব সনদে নাসাঈ শরীফ বর্ণিত হয়েছে তার একজন রাবী হলেন এই ফানজুবী। মুবারকপুরী তাকে না চিনলে নাও চিনতে পারেন। কারণ তার অধ্যয়নের গ-ি ছিল খুবই সীমিত। তার তুহফাতুল আহওয়াযী দেখলে যে কোন পাঠকই তা আঁচ করতে পারবেন। কিন্তু এই কম্পিউটার যুগে যখন ফানজুবী লিখে সার্চ দিলেই সব নাড়ি-নক্ষত পত্র্যক্ষ করা যায়, তখন যদি কেউ পূর্ববর্তী কারোও অন্ধ অনুসরণ করে এমন লাফালাফি করেন তবে নিজের পা ভাঙ্গা ছাড়া কিছুই হবে না।

    ফানজুবীর জীবনী নিয়ে অনেক মনীষীই আলোচনা করেছেন। ইবনুল আছীর আল জাযরী রহ. করেছেন তার আল লুবাব ফী তাহযীবিল আনসাব গ্রন্থে, তিনি তাকে হাফেজে হাদীস উপাধিতে উল্লেখ করেছেন। যাহাবী রহ. করেছেন তার সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (১৩/২৪৫), আল ইবার (১/৪২৬) ও তাযকিরাতুল হুফফাজ (৩/১০৫৭) গ্রন্থতয়ে, ও ইবনুল ইমাদ করেছেন তার শাযারাতুয যাহাব গ্রন্থে (৩/২০০)। সুয়ূতী লাআলিল মাসনূআহ গ্রন্থে বলেছেন, حافظ كبير বড় হাফেজে হাদীস। (২/৩৭) যাহাবী আল ইবার গ্রন্থে একথাও লিখেছেন যে, وكان ثقة مصنفا তিনি বিশ্বস্ত ও গ্রন্থকার ছিলেন।

    এমন একজন মহান ব্যক্তি সম্পর্কে মুযাফফর বিন মুহসিন পূর্বোক্ত বক্তব্যের পর একথাও বলেছেন যে, যার কোন পরিচয়ই নেই তার বর্ণনা কিভাবে গ্রহণীয় হতে পারে? মুহাদ্দিসগণের নিকটে এরূপ বর্ণনা জাল বলে পরিচিত্র।

    এই শেষ কথাটিও তিনি ভুল বলেছেন। রাবী অপরিচিত্র হলে তার বর্ণনাকে মুহাদ্দিসগণ যঈফ বলেন, জাল বলেন না। আবার যদি তার সমর্থক বর্ণনা থাকে, তখন সেটা হাসান স্তরে উন্নীত হয়। হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি বিষয়ে লেখা প্রায় সকল কিতাবেই একথা পাওয়া যাবে। এখানে ফানজুবী তো সুপরিচিত্র। অপরিচিত্র হলেও তার বর্ণনার সমর্থনে আরেকটি সনদ বা সূত্র রয়েছে। সুত্ররাং এটিকে যঈফ বলারও সুযোগ নেই, জাল বলা তো দূরের কথা।

    এ দীর্ঘ আলোচনার কারণ

    এ দীর্ঘ আলোচনা করতে হলো তাদের দাবী যে কত অসার শুধু তা প্রমাণ করার জন্য। অন্যথায় হাদীসটির এমন সূত্র রয়েছে, যেখানে ফানজুবী, আবু উসমান ও আবু তাহির কেউ নেই। আল ফিরয়াবী তার আস সিয়াম গ্রন্থে (হা. ১৭৬) ইয়াযীদ ইবনে হারূন থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। ইয়াযীদ ইবনে হারূন বর্ণনা করেছেন ইবনে আবূ যিব রহ.এর সূত্র্রে ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা থেকে, তিনি সাইব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে। এমনিভাবে আলী ইবনুল জা’দ রহ. স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন। (হা. ২৮২৫) ইমাম মালেকও সরাসরি ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। (দ. ফাতহুল বারী, ২০১০ নং হাদীসের আলোচনা)

    ২য় আপত্তিটির জবাব একটু পরেই আসছে।

    ৩য় আপত্তিটি হলো হাদীসটি মুযতারিব। পরিভাষায় মুযতারিব ঐ হাদীসকে বলা হয়, যার এক বা একাধিক রাবী বিভিন্ন শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেন। এই বিভিন্ন শব্দের মধ্যে যদি সমন্বয় করা সম্ভব হয়, কিংবা কোন একটিকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা যায় তবে হাদীসটি আর যঈফ বলে গণ্য হয় না।

    আলোচ্য হাদীসটির ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম ২৩ রাকআতের বর্ণনাকে অগ্রগণ্য আখ্যা দিয়েছেন। কেননা দুটি অবিচ্ছিন্ন সূত্র্রের বর্ণনা ও  চারটি সহীহ মুরসাল বর্ণনা এর সমর্থনে রয়েছে, আবার এর উপর সালাফে সালেহীনের আমলও ছিল।

    Alauddin Rahmani
  • আল কুদসঃ দুরবর্তী মসজিদ।

    মহান আল্লাহ তায়ালা মেরাজের রাত্রিতে রসুলুল্লাহ (সঃ)কে বোরাকে করে পবিত্র মক্কা থেকে এই আল কুদসে এনেছিলেন। এখানে রসুলুল্লাহ(স) সকল নবী-রসুল(আঃ)দের নিয়ে ইমামুল আম্বিয়া হিসাবে নামায আদায় করেন। এই আল কুদসই ছিল প্রথম ইসলামি রাষ্ট্রের রাজধানী। এখানে শুয়ে আছেন হাজার হাজার নবী-রাসুল(আঃ)গণ। এই কুদস শুধু মুসলিমদের জন্য গুরুতপুর্ন নয়, ইহুদী-খ্রিষ্টানদেরও তীর্থস্থান। গত ৭০ বছরের অধিক সময় ধরে এই আল কুদস দখল করে আছে জা/ওনিষ্ট ই/হুদীরা। যারা গত অক্টোবর থেকে নির্বিচারে চালাচ্ছে গনহত্যা সহ সকল নির্মম অত্যাচার। আজ আমরা আল কুদস নিয়ে কথা বলব পবিত্র কুর’আন এবং ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। আপনাদের ধৈর্য্যসহকারে পুরো লেখাটা পড়ার অনুরোধ করছি।

    ইতিহাসের পাতায় যাওয়ার আগে চলুন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনের কুদসের ব্যাপারে কি বলেছেন এবং এর সাথে আমাদেরকে কি সতর্কবানী দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনে সুরা আল বনি ইসরাইলে আল কুদসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট কথা বলেছেন। সুরাহ আল বনি ইসরাইলের আল কুদসের আয়াত গুলো দেখার আগে চলুন একটা হাদিস দেখি যা আমাদের সুরা আল বনি ইসরাইলের সেই আয়াতগুলো বুঝতে সাহায্য করবে। সহীহ মুসলিম শরিফের ৩৪ নম্বর বইয়ের ৬৪৪৮ হাদিসে

    আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতন একই পথেই হাঁটবে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে এবং ধাপে ধাপে। যদি তারা টিকটিকির/ সরীসৃপের গর্ত  প্রবেশ করতো, তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে। আমরা বললাম: আল্লাহর রাসূল, (আপনার কথার দ্বারা) আপনি কি ই/হুদী ও খ্রি/স্টানদের “আমাদের পূর্ববর্তীদের’ হিসাবে বুঝাচ্ছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (ওই দুই দল ছাড়া) আর কে? (সহীহ মুসলিম বই ৩৪, হাদিস নম্বর ৬৪৪৮)

    তাঁর মানে আমরা মুসলিমরা ঠিক ই/হুদী-খ্রি/ষ্টানদের মতন চলব এবং সৎপথ থেকে বিচ্যুত হব। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অশেষ রহমত উনি আমাদেরকে বারবার সঠিক পথে ফেরত আনবেন বিভিন্ন পরীক্ষা করার মাধ্যমে। পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত বনি ইসরাইলীদের উদ্দেশ্যে যা বলেছেন তা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। আল্লাহ তায়ালা সুরাহ আল বনি ইসরাইলের ৪নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইলীদের বলেনঃ

    وَقَضَيْنَآ إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ فِى ٱلْكِتَـٰبِ لَتُفْسِدُنَّ فِى ٱلْأَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّۭا كَبِيرًۭا ٤

    এবং আমি কিতাবে (তাওরাতে) প্রত্যাদেশ দ্বারা বানী ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় উদ্ধত্যকারী হবে। (সুরা আল বনি ইসরাইল, আয়াতঃ ৪)

    আর পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

    فَإِذَا جَآءَ وَعْدُ أُولَىٰهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًۭا لَّنَآ أُو۟لِى بَأْسٍۢ شَدِيدٍۢ فَجَاسُوا۟ خِلَـٰلَ ٱلدِّيَارِ ۚ وَكَانَ وَعْدًۭا مَّفْعُولًۭا ٥

    অতঃপর যখন দু’টির মধ্যে প্রথমটির সময় এসে উপস্থিত হল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দিলাম আমার বান্দাদেরকে যারা ছিল যুদ্ধে অতি শক্তিশালী, তারা (তোমাদের) ঘরের কোণায় কোণায় ঢুকে পড়ল, আর সতর্কবাণী পূর্ণ হল। (সুরা আল বনি ইসরাইল, আয়াতঃ ৫)

    সুরা আল বনি ইসরাইলের পাচ নম্বর আয়াত অনুযায়ী মুসলিমদের ১৪০০ বছরের ইতিহাসেও এই ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ইসলামী স্কোলার এবং ঐতিহাসিকদের মতভেদ আছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে প্রথম ক্রু/সেড এই ঘটনার খুব কাছের।

    প্রথম ক্রু/সেড হয়েছিল একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীর ঠিক সন্ধিক্ষনে। এর পিছনে ছিল ভু-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণ। চলুন অর্থনৈতিক কারণের দিকটার দিকে তাকাই। এটা বুঝতে হলে কথাবলতে হবে সিল্ক রোড নিয়ে। এই সিল্ক রোডের মাধ্যমে চীন এবং ভারতবর্ষের সাথে মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার সকল বানিজ্য সংযুক্ত ছিল। পবিত্র কুর’আনের সুরা আল বাকারার ২৭৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা খুব সুস্পষ্টভাবে বলছেন তিনি ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। তাই মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার সকল মুসলিম শাসকেরা ব্যবসাকে উতসাহিত করতেন। শুধু তাই না নিজেদের মধ্য শত বিভক্তি থাকলেও কখন ব্যবসায়ীদের ক্যারাভানকে আক্রমন করতেন না। সবস্থানে মূল্যের সমতা ছিল এক। বিভিন্ন শহরে নির্মান করেছিলেন সরাইখানা, যাতে ছিল মালামালে নিরাপত্তা এবং খাদ্য-পানীয়ের সুব্যবস্থা। তাই মুসলিম আমলে সিল্ক রোডের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। আর এই সিল্ক রোডটি তিনটি পথে ইউরোপের সাথে বানিজ্যিক সংযোগ স্থাপন করেছিলেন

    (১) কনস্টান্টিনোপলের মধ্য দিয়ে সড়ক পথে

    (২) মধ্য প্রাচ্যের সমুদ্রবন্দর হয়ে ইটালীয় সিটি স্টেটের বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে এবং

    (৩) আল আন্দালুস তথা মুসলিম স্পেন দিয়ে সড়ক পথে

    আর এ জন্য বাইজানটাইন সাম্রাজ্য এবং মুসলিমরা বিশ্ববানিজ্যের সুবিধা ভোগ করত, ছিল অর্থ-সম্পদে পরিপুর্ণ। অপরপক্ষে ইউরোপ ছিল অর্থনৈতিকভাবে দৈন্য। সুতরাং যার হাতে থাকবে কনস্টান্টিনোপল, মধ্য প্রাচ্যের সমুদ্রবন্দর এবং আল-আন্দালুস সে হবে তখনকার দিনের বিশ্ববানিজ্যের অধিপতি, তাঁর হাতে থাকবে বিশ্ব শাসনের চাবি

    চলুন এখন দেখি দ্বিতীয় ভু-রাজনৈতিক কারন। মানজিকার্টের যুদ্ধের পর সেলজুক সাম্রাজ্য প্রায় সমগ্র আনাতোলিয়া দখল করেছিল। পৌছে গিয়েছিল কনস্টান্টিনোপলের দ্বোরগোড়ায়। সেলজুকদের কনস্টান্টিনোপল আক্রমন ছিল মাত্র সময়ের ব্যাপার। যদি সেলজুকরা কনস্টান্টিনোপল দখল করে ফেলে, তাহলে বিশ্বের বুক থেকে হারিয়ে যাবে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য চিরজীবনের জন্য। তাই বাইজানটাইন সম্রাট এলেক্সিস সেই ভয়ে পোপের কাছে সাহায্য চায়। অপরপক্ষে আল-আন্দালুসে মুসলিমদের অবস্থান এবং আনাতোলিয়াতে সেলজুকদের বিজয় সমগ্র ইউরোপকে আতংকিত করে তুলে। সুতরাং সম্রাট এলেক্সিসের সাহায্য কামনা ছিল পো/পের সেই ভয় থেকে রক্ষার পাবার এবং বিশ্ব শাসন করার অধরা চাবির হাতছানি।

    চলুন দেখি একাদশ-দ্বাদশ শতকের মুসলমানদের অবস্থা এবং প্রথম ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ। তখন মধ্য-প্রাচ্যে ছিল দুটি মুসলিম শক্তিঃ (১) শিয়া ফাতেমীয় খিলাফত এবং (২) সুন্নী সেলজুক সাম্রাজ্য। জেরুসালেম এবং আশেপাশের এলাকা নিয়েছিল এই দুই শক্তির সর্বদা লড়াই। সুলতান মালিক শাহের মৃত্যুর পর সেলজুক সাম্রাজ্য মোটামুটি ছোট ছোট আতাবেগ রাজ্যে ভাগ হয়ে পড়ে। অনুরুপভাবে ফাতেমীয় খলিফা আল হাকিমের মৃত্যুর পর ফাতেমীয়রা নিজেদের উযীরদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তখন ছিল ধর্মের নামে ব্যাপক অরাজকতা। উদাহরন দিলেই বুঝা যাবে। ফাতেমীয় খলিফা আল হাকিম যাকে পাগল খলিফা বা মিশরের নিরো বলা হয়, সে তার শাসনামলে বিভিন্ন ধর্মীয় অনাচার করে। সবাইকে সে শিয়া মতবাদে আসার জন্য জোড় চালায়। সে প্রথম তিনজন রাশেদুন খলিফাদের জুম্মার খুতবায় অভিশাপ দিত। ফজরের আযানে “আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম”-এর বদলে চালুন করেন “হাইয়া আলা খাইরাল আমাল”। সালাতুল তারাবীহ এবং সালাতুল দুহা নিষিদ্ধ করেন। ইহুদী-খ্রিষ্টানদের জন্য লাল এবং কালো রঙ্গয়ের পোষাক পড়তে বাধ্য করেন। ৩৫০ বছরের খলিফা উমর (রাঃ) এবং প্যাট্রিয়াক সফ্রনিয়াসের মধ্যকার চুক্তি ভেঙ্গে জেরুসালেমের চার্চ অব হলি সেপালকার গুড়িয়ে দেন। জেরুসালেম গামী ইহুদী-খ্রিষ্টান তীর্থযাত্রীদের আক্রমন করেন। আর সুন্নী আব্বাসীয় খলিফা বাগদাদে নামমাত্র খলিফা। সেলজুকরা ছিল আব্বাসীয়দের নিয়ন্ত্রনকারী। সেলজুকদের সাথে তাদের ছিল ভালো সম্পর্ক। এক খলিফা আরেক খলিফার নামে প্রকাশ্যে এবং গোপনে বিভিন্ন রকম ধর্মীয় ফাতোয়া জারি সহ আমিরদের নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেন। শুধু তাই না, সেলজুক, আব্বাসীয় খলিফা এবং ফাতেমীয়রা বিলাসিতা, মদ, নারী, গান-বাজনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে, ঘটে চারিত্রিক অধঃপতন। জেরুসালেমের চার্চ অব হলি সেপালকার ধ্বংশ এবং তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমন পোপকে এনে দেয় তাঁর সুপ্ত বাসনা পুরণের ছুতা। তাঁর উপর সম্রাট এলেক্সিসের অনুরোধ এটাকে পরিপুর্নতা এনে দেয়। মুসলিমদের এহেন অধঃপতনে নেমে আসে আল্লাহ’র সতর্কিত শাস্তি যা আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলের ৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন। একে একে ক্রু/সেডাররা দখন করে নেয় এন্টিওক, একের, ট্রিপলি, জেরুসালেম। চালায় তান্ডবলীলা। তাদের ধ্বংশযজ্ঞ এতোই নির্মম এবং নিষ্ঠুর ছিল যে ছয় মাসের মধ্যে জেরুসালেম শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায়।

    প্রায় শত বছরের মধ্যে আল্লাহ পালা বদল করে দেন। বিজয় দান করেন মুসলিমদের সা/লাহউ/দ্দিন আইয়ুবীর হাত দিয়ে। তাকে আল্লাহ দেন সমগ্র মিশর, সিরিয়া এবং হিজায এলাকার অধ্যিপত্য। এর পিছনে কারন ছিলঃ (১) তিনি রাষ্ট্র এবং জীবনের সর্বস্তরে ইসলামের পালন নিশ্চিত করেছিলেন এবং (২) মুসলমানদের এ/ক/তার প্রতীক আব্বাসীয় খলিফার অ/নুগত্যতা স্বীকার করেছিলেন। এ যেন সুরা বনি ইসরাইলের ষষ্ঠ আয়াতের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আল্লাহ আজ্জা অজ্জাল সুরা বনি ইসরাইলের ষষ্ঠ আয়াতে বলেনঃ

    ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ ٱلْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَـٰكُم بِأَمْوَٰلٍۢ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَـٰكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا ٦

    অতঃপর আমি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করলাম আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করলাম, তোমাদেরকে জনবলে বহুগুণ বাড়িয়ে দিলাম। (সুরা আল বনি ইসরাইল, আয়াতঃ ৬)

    অনেকে বলতে পারেন এটা কাকতালীয়। আসলে কিন্তু কাকতালীয় নয়, বরং কুর’আনের মুজেজা। এটা বুঝতে হলে আমাদের ইতিহাসের আরেকটা দিকে তাকাতে হবে। উনবিংশ-বিংশ শতকের সন্ধিক্ষনের পৃথিবীর দিকে যদি দেখি। দেখব, তখন ব্রি/টিশ সাম্রাজ্য সমগ্র পৃথিবী শাসন করছে, পুরো বিশ্ব বানিজ্য তাদের হাতে। এই বানিজ্য তারা পরিচালনা করছে সমুদ্রপথে। অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত সিল্ক রোড বিশ্ববানিজ্যের অন্যতম অংশীদার ছিল। কিন্তু উনবিংশ শতকে সিল্ক রোড মৃত। কারণ, সিল্ক রোডের মধ্য এশিয়া অঞ্চল রাশিয়ান জারের অধীনে। মধ্য-প্রাচ্য উসমানী খিলাফত আর পারস্য সাম্রাজ্যের মাঝে বিভাজিত। সিল্ক রোডের দুই বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতবর্ষ ব্রি/টিশের কলোনী আর চীন বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তির খেলার জায়গা। তখন পর্যন্ত ব্রি/টিশদের সমুদ্রপথের একচেটিয়া বিশ্ব বানিজ্যের সম্ভাব্য প্রতিদন্দ্বী সিল্ক রোড। যদি কোনোভাবে সিল্ক রোড তাঁর পুর্বের অবস্থায় ফেরত আসে তাহলে বিশ্ব বানিজ্যের একচেটিয়া প্রাধান্য হারাতে হবে ব্রি/টিশদের চিরদিনের জন্য। আর এটা শুধুমাত্র সম্ভব যদি মুসলমানেরা যদি এক হয় ঠিক সিল্ক রোডের স্বর্ণযুগের মতন। ইসলাম তথা আল্লাহ এবং আল্লাহ’র রসুল (সঃ)-এর জন্য মুসলিমরা যেকোন সময় এক হতে পারে। তাহলে করণীয় কি ব্রি/টিশদের?

    প্রথমতঃ সেই একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর মতন কনস্টান্টিনোপল, মধ্য প্রাচ্যের সমুদ্রবন্দর এবং ভুমধ্যসাগরের নিয়ন্ত্রন করা। তাই তারা ভুমধ্যসাগরের জিব্রাল্টার, মাল্টা, সাইপ্রাস দখল করে। বাকি রইল কনস্টান্টিনোপল, এবং মধ্য প্রাচ্যের সমুদ্রবন্দর, যা কিনা উসমানীদের হাতে।

    দ্বিতীয়তঃ এমন অবস্থা বা ব্যবস্থা চালু করা যাতে মুসলমানেরা কোনোদিন এ/ক না হতে পারে।

    এখন যদি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মুসলিমদের অবস্থার দিকে তাকাই। দেখব, (১) উসমানী খিলাফত আর পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে সর্বদা যুদ্ধ চলমান, (২) একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর মতন মিশর, আরব উপদ্বীপে ছোট ছোট আমিরাতে উদ্ভব হয়েছে। ভারত, মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের মুসলমানেরা বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তির কলোনীর নিগরে বন্দি। (৩) অর্থনৈতিকভাবে মুসলমানেরা দুর্বল। (৪) সামরিকভাবে ইউরোপীয়দের উপর সম্পুর্ণভাবে নির্ভরশীল, (৫) একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর মতন শাসকেরা অত্যাচার করছে আলেম-উলামাদের কারণ তারা শাসকদের অনৈসলামিক কার্যোকলাপের বিরুদ্ধে কথা বলেন। (৬) বিচার ব্যবস্থায় উসমানী সুলতানরা ছিলেন আইনের উর্ধ্বে। (৭) অনেক ইসলামী বিধিবিধানের অপব্যবহার ছিলঃ ভ্রাতৃহত্যা আইন। সাম্রাজ্যের একতার নামে সুলতান তাঁর অন্যান্য ভাইদের হত্যা করার ফাতোয়া জারি করেন। (৮) খালেদ ফাহমী মতে উনবিংশ শতকে ইসলামী দেওয়ানী এবং ফৌজদারী আইনের বিপরীতে নিজস্ব উসমানী আইন চালু করা হয়। (৯) ছেলে -মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা ব্রোথেল ছিল। সুরা আল বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবাহানু তায়ালা আমাদের ব্যভিচারের নিকট যেতে মানা করেছেন এবং এটাকে অশ্লীল এবং নিকৃষ্ট কাজ বলেছেন। (১০) ছিল মদের ছড়াছড়ি। ইউনিভার্সিটি অব রোডসের মেহমেট ইয়ালছিনের মতে উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইস্তানবুল শহরেই ছিল পাচশত মদের দোকান। ঠিক যেন একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি। বরং আরো খারাপ অবস্থা।

    একে তো মুসলমানেরা ধর্মীয়ভাবে অধঃপতিত, তাঁর উপর ব্রি/টিশদের বিশ্ব বানিজ্যের চিরস্থায়ীত্বের স্বপ্ন। ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ব্রি/টিশদের বিশ্ব বানিজ্যের চিরস্থায়ীত্বের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ এনে দেয়। প্রথমে তারা গ্যালিপোলি দিয়ে কনস্টান্টিনোপল দখল করার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তারপর ১৯১৭ সালে দখল করে জে/রুসালেম এনং ততসংলগ্ন এলাকা। ক্রু/সেডারদের মতন ব্রি/টিশরা ভাগ করে ফেলে মধ্যপ্রাচ্য ফ্রান্স এবং নিজেদের মধ্যে। সাথে সাথে তারা কাজ শুরু করে এমনভাবে যাতে কোনোদিন মু/সলমানেরা সা/লাহউ/দ্দিনের মতন জয়ী হতে না পারে। তাঁর জন্য
    (১) মুসলমানেদের এ/ক/তা ধ্বংশ করে জাতীয়/তা/বাদের ধোয়া তুলে। জাতীয়/তা/বাদের ধোয়াতে কোনদিন আরব-অনারব এক হবে না। এক না হলে তাদের দখল্কৃত সমুদ্রবন্দরগুলোও কখন মুসলিমরা দখল করবে না। আর যদি ভবিষ্যতেও এক হয়, তবে যেন সমুদ্র বন্দরগুলো যাতে মুসলমানেদের হাতে না থাকে। যেই চিন্তা যেই কাজ, এ জন্য ১৯৪৮ সালে হাইফা, গাযা সহ মধ্যপ্রাচ্যের ভুমধ্যসাগরীয় সকল বন্দর জা/ওনিষ্ট ই/সরা/ইলীদের হাতে দিয়ে চলে যায়।
    (২) খলিফা ছিলেন মুসলমানদের এ/ক/তা প্রতীক। খ/লিফা নাই, মুসলমানরা কোনদিন এ/ক হবে না এক খলিফার অধীনে। সুতরাং কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে ১৯২৪ সালে খি/লা/ফতের অবলুপ্তি ঘটায় তারা।
    (৩) সকল দুর্বল ইমান এবং চরিত্রের লোকেদের কাছে জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননের শাসন ভার দিয়ে প্রস্থান করে।যাতে তারা কোনোদিন মুসলিম উম্মাহকে একত্র না করতে পারে এবং পরোক্ষভাবে যাতে ওই সকল দুর্বল ইমান এবং চরিত্রের লোকেদের দিয়ে এখানকার মুসলমানদের শাসন করা যায়।
    (৪) যখন কোনো শাসক দুর্বল ইমান এবং চরিত্রের অধিকারী হয়, তখন তারা আ/লেম-উ/লামাদের নির্যাতন করে তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। কারণ ই/স/লাম হয়ে দাঁড়ায় তাদের দুষ্কৃতির বাধার কারণ। সুতরাং আ/লেম-উ/লা/মারা নির্যাতন থেকে বাচার জন্য শাসন ব্যবস্থা থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন।
    (৫) তখন পর্যন্ত জনসাধারনের মাঝে ইমান এবং আকীদা ছিল শাসক শ্রেনী থেকে উত্তম। জনসাধারন যাতে এই দুর্বল শাসকদের উতখাত না করে, তাঁর জন্য তারা জনসাধারনের মাঝ থেকে ইসলামকে দূরে সরানোর পায়তারা করে। যার জন্য এরা প্রথম আঘাত আ/রবী ভাষাতে। আরবী ভাষাকে সকল পর্যায় থেকে অপসারন করে। আ/রবী ভাষা না জানলে, কু/র’আন, হা/দিস, ফি/কহ বুঝবে না। না বুঝতে পারলে, পারবে না আল্লাহ’র দেখানো সৎ এবং সঠিক পথে চলতে।
    (৬) এরপর চালানো হয় ও/য়ার অন টে/রর নামে বিশ বছর ব্যাপী ই/সলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, যাতে জনসাধারনের মনে ই/সলামের নামে ভীতি কাজ করে।
    (৭) শুধু এখানেই থেমে নেই, মুসলমানদের চরিত্র, এবং আমল নষ্ট করার জন্য চালু করা হয় বিভিন্ন পন্থা। যেমন স্যোশাল প্লাটফর্ম, প্রিন্ট এবং ব্রডকাষ্ট মিডিয়া, এবং ইন্টারনেটে ছাড়া হয় বিভিন্ন রকমের আপত্তিকর মুভি, বার্তা, লেখা যা মুসলমানরা তথা সকল মানুষ ব্যাপক হারে ব্যাভিচারের জেনে, না জেনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লিপ্ত হয়। (৮) সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি মানুষের মাঝে আষ্টেপিষ্টে জরিয়ে দিয়েছে। এতে আল্লাহ দৃষ্টিতে আমরা হচ্ছি অপরাধী।

    তাইতো আল্লাহ সুরা বনি ইসরাইলের সপ্তম আয়াতে বলেনঃ

    إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ ۖ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا ۚ فَإِذَا جَآءَ وَعْدُ ٱلْـَٔاخِرَةِ لِيَسُـۥٓـُٔوا۟ وُجُوهَكُمْ وَلِيَدْخُلُوا۟ ٱلْمَسْجِدَ كَمَا دَخَلُوهُ أَوَّلَ مَرَّةٍۢ وَلِيُتَبِّرُوا۟ مَا عَلَوْا۟ تَتْبِيرًا ٧

    তোমরা ভাল কাজ করলে নিজেদের কল্যাণের জন্যই তা করবে, আর যদি তোমরা মন্দ কাজ কর, তাও করবে নিজেদেরই জন্য। অতঃপর যখন দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় আসলো, (তখন আমি তোমাদের শত্রুদেরকে শক্তি দিলাম) যেন তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয়, আর মাসজিদে (আকসায়) ঢুকে পড়ে যেভাবে তারা সেখানে প্রথমবার ঢুকে পড়েছিল, আর তাদের সম্মুখে যা পড়ে তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। (সুরা আল বনি ইসরাইল, আয়াতঃ ৭)

    বাস্তবে সত্যে পরিনত হল সপ্তম নম্বর আয়াতটি। আজ আমরা মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছি চীন, কাস্মীর, বার্মা, ফিলিস্তিন তথা সমগ্র পৃথিবীতে। আমাদের মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানাচ্ছে। মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে হত্যা করছে। মসজিদে দিচ্ছে না নামাজ পড়তে। আর আমরা আল্লাহ’র দিকে না ছুটে যাচ্ছি তাদের তথা নব্য ক্রু/সেডারদের দিকে যারা আমাদের এই অবস্থার জন্য দায়ী। আপনি কি মনে করেন তারা তাদের এত বছরের কাজের ফসল (তথা মধ্যপ্রাচ্য দখল করল,বসালো তাদের তাবেদার লোকজন,ধ্বংশ করল মুসলমানদের বানিজ্য, ইচ্ছাকৃতভাবে বসালো ই/হুদীদের যাতে ভুমধ্যসাগরীয় বন্দরসমুহ যাতে মুসলমানদের হাতে না থাকে) না তুলে, আমাদের সাহায্য করবে ফি/লিস্তিন-ই/সরাইল সমস্যা সমাধানের জন্য, তাহলে বলব আমরা বোকার রাজ্যে বসবাস করছি। আমাদেরকে আমাদের রবের দিকে ফেরত যেতে হবে ঠিক যেমনটি ফেরত গিয়েছিলেন এই উম্মাহের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সাহাবী আযমাইনরা। আমরা যদি আল্লাহ’র দিকে ফেরত না আসি, তাহলে কুদস, বা/বরী মসজিদের মতন আরো মসজিদ আমাদের থেকে হারিয়ে যাবে। মসজিদ আমাদের ইমান এবং আকিদার মাপকাঠি। ঠিক যতবার মুসলিমরা আল্লাহ’র দেয়া নির্ধারিত পথ থেকে দূরে সরে গেছে,ঠিক ততবার মু/সলিমরা হেনেস্থা হয়েছে অ/মুসলিম/দের হাতে। আর আমাদের ঠিক করতে হবে আমাদের ইমান, ইলম এবং আমল। এজন্য আমাদের জানতে কুর’আনের ভাষা, বুঝতে হবে কুর’আন, এবং হাদিসকে আর আমল করতে হবে সেই অনুযায়ী। তাহলে আমাদের হারানো মসজিদ আমাদের মাঝে ফেরত আসবে।

    ভালো থাকবেন।

    পুনশ্চঃ আমার লেখা ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং নতুন কোনো অজানা তথ্যের পোষ্ট পেতে আমার পেইজে (নিজের চিন্তা, নিজের লেখা) লাইক দিন। ক্রেডিট ছাড়া কপি-পেষ্ট বা শেয়ার না করার অনুরোধ রইল। বিরূপ/ আক্রমনাত্মক/ আজেবাজে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। পেজের আডমিন/ লেখক যেকোনো মন্তব্য অপ্রয়োজনীয় মনে করলে মন্তব্যটি ডিলিট বা মুছে দেবার অধিকার সংরক্ষন করেন।
    ভালো থাকবেন।

  • কুরআনের আলোকে ইহুদিজাতি-৩
    ইহুদিদের প্রথম স্থলযুদ্ধ

    বিজয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও ইহুদিরা তাদের জীবনের প্রথম স্থলযুদ্ধে নামতে সাহস করেনি,
    فَاذْهَبْ اَنْتَ وَرَبُّکَ فَقَاتِلَاۤ اِنَّا هٰهُنَا قٰعِدُوْنَ
    তুমি ও তোমার রব চলে যাও এবং তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আমরা তো এখানেই বসে থাকব (মায়েদা: ২৪)।
    ইবরত: ইহুদিদেরকে ফিলিস্তীনের প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা অতি সহজ বিজয়ের পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছিলেন। মুসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে বলেছিলেন,
    ادْخُلُوا الْاَرْضَ الْمُقَدَّسَۃَ الَّتِیْ کَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوْا عَلٰۤی اَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خٰسِرِیْنَ
    আল্লাহ তোমাদের জন্য যেই পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন, তাতে প্রবেশ কর নিজেদের পশ্চাদ্দিকে ফিরে যেও না; তা হলে তোমরা উল্টে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে (মায়েদা: ২১)।
    ইবরত: ইহুদিরা নিশ্চিত আশ্বাস ও ভয়ানক হুমকি সত্ত্বেও ফিলিস্তীনে প্রবেশ করতে সম্মত হয়নি। তাদের মধ্যে থাকা দুজন ভালো মানুষ সবাইকে একথাও বলেছিল,
    ادْخُلُوْا عَلَیْهِمُ الْبَابَ ۚ فَاِذَا دَخَلْتُمُوْهُ فَاِنَّكُمْ غٰلِبُوْنَ ۬ۚ وَعَلَی اللهِ فَتَوَکَّلُوْۤا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ
    তোমরা তাদের উপর চড়াও হয়ে (নগরের) দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। তোমরা যখন প্রবেশ করবে, তখন তোমরাই বিজয়ী হবে। আল্লাহ তাআলার উপরই ভরসা রেখ, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও (মায়েদা: ২৩)।
    ইবরত: এত নিশ্চিত উৎসাহ ও প্রেরণা পাওয়ার পরও ইহুদিদের মনে বিন্দুমাত্র সাহসের সঞ্চার হয়নি। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলেছিল,
    اِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَاۤ اَبَدًا مَّا دَامُوْا فِیْهَا
    তারা যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে  (সেই দেশে) অবস্থানরত থাকবে, ততক্ষণ আমরা কিছুতেই সেখানে প্রবেশ করব না (মায়েদা: ২৪)।
    ইবরত: ইহুদিরা কখনোই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে পারবে না। যুদ্ধ প্রশ্নে ইহুদিরা চিরকাল দ্বিধাবিভক্ত থাকবে। মুসার সময়ও তারা বহুধাবিভক্ত ছিল। আল্লাহর মনোনীত বাদশাহ তালুতের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়েও ইহুদিরা বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল (বাকারা: ২৪৯)। কুরআন বলছে,
    لَا یُقَاتِلُوْنَكُمْ جَمِیْعًا اِلَّا فِیْ قُرًی مُّحَصَّنَۃٍ اَوْ مِنْ وَّرَآءِ جُدُرٍ
    তারা সকলে একাট্টা হয়েও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, তবে এমন জনপদে (করবে), যা প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত অথবা দেওয়ালের আড়ালে লুকিয়ে (হাশর: ১৪)।
    ইবরত: ইহুদিদের ব্যাপারে এটা চিরন্তন সত্য। তারা সম্মুখসমরে নামতে ভীষণ ভয় পায়। তারা হয় বিমান হামলা করে জয়ী হয় না হয় ট্যাংকে সুরক্ষিত আচ্ছাদনে থেকে জয়ী হয়। আরবদের বিরুদ্ধেও ইহুদিরা বিমান ও ট্যাংকের মাধ্যমে জয়ী হয়েছিল।
    ইবরত: এবারও ইহুদিরা বিমান ও ট্যাংকের আড়াল থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থলযুদ্ধে ইহুদিরা নামতে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তিনলক্ষাধিক সেনা গাযা সীমান্তে আজ বিশদিন হয়ে গেছে। ইহুদিরা এখনো গাযায় স্থল অভিযান শুরু করতে পারে নি। দুয়েকবার চেষ্টা করেও পিছিয়ে এসেছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরবদের বিরুদ্ধে ইহুদিরা জয়ী হয়েছিল। সে যুদ্ধও ইহুদিরা নিজের শক্তিতে জয়ী হয়নি। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের সম্মিলিত সার্বিক সহযোগিতায় জয়ী হয়েছিল। সেই জয় ইহুদিদের জয় ছিল না; ছিল ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যবাদী খ্রিস্টশক্তির জয়।
    ইবরত: সূরা মায়েদায় ইহুদিরা বলেছিল, আগে ফিলিস্তীনে থাকা বিরোধীপক্ষ বের হয়ে গেলে, তারা ফিলিস্তীনে প্রবেশ করবে। গাযার ক্ষেত্রে হুবহু একই ঘটনা ঘটছে। তারা পুরো গাযা খালি করে ফেলতে চাইছে। এবারও আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স সরাসরি সর্বশক্তি দিয়ে ইহুদিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার কি ইহুদিরা জিতবে? কক্ষনো না। বিমান ও ট্যাংকের কারণে ইহুদিরা কিছু সুবিধা পাবে হয়তো। কিন্তু তাদের পক্ষে চূড়ান্ত জয় লাভ করা সম্ভব হবে না। ইহুদিদের পরিণতির কথা কুরআনেই আছে (فَتَنْقَلِبُوْا خٰسِرِیْنَ) তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই ফিরবে।
    ইন শা আল্লাহ।

  • সোশ্যাল মিডিয়া আমাদেরকে জীবনের একটা রূপ দেখায়, অন্য একটা রূপ গোপন করে রাখে।

    আচ্ছা, আপনার বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ কি সচরাচর লেখে, ‘আজ আমার বউয়ের সাথে তুমুল ঝগড়া হয়েছে?’ অথবা, ‘জামাইয়ের সাথে আমার ভীষণ মান অভিমান চলছে?’


    সাধারণত, এরকম কেউ লেখে না। কিন্তু দেখবেন মানুষের টাইমলাইন বউয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার ছবি, ফুচকা আর আইসক্রীম খাওয়ার কথা, বউয়ের জন্য ফুল নিয়ে আসার কথা, নিজেদের বিবাহ বার্ষিকী কথা ইত্যাদিতে ভরপুর। অর্থাৎ, সকল সুন্দর স্মৃতিগুলোই মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে। জীবনের যে স্মৃতিগুলো অসুন্দর, তিক্ত আর কদর্য, সেগুলো মানুষ লুকিয়ে রাখে।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষেরা শুধু সফলতার গল্পটুকুই বলে, ব্যর্থতার গল্পটুকু বলে না। আমি বলছি না যে বউয়ের সাথে ঝগড়া, মান অভিমান আর টানাপোড়েনের কথা মানুষকে বলে বেড়াতে হবে।

    কিন্তু, এটার একটা ক্ষতিকর দিক আছে। একজন লোক যে সংসার জীবনে ভীষণ টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যার সাথে স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছে না কোনোভাবে, সে যখন অন্যের সংসারের সুখ আর সমৃদ্ধির স্মৃতিগুলো দেখে, তার তখন ভীষণ হতাশা কাজ করে। নিজেকে তখন তার কাছে বোঝা মনে হয়। কিন্তু সে বোঝে না—এই সুন্দর স্মৃতি যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছে, তার জীবনের দিনগুলো সর্বদা এরকম সুখী সুখী অবস্থায় যায় না। তারও বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়, মান অভিমান হয়।

    যে লোক বেকার বসে আছে, যার কোনো চাকরি মিলছে না, সে যখন বন্ধু তালিকার একের পর এক লোককে চাকরিজীবনে উন্নতি করতে দেখে, তার তখন নিজেকে অপদার্থ অপদার্থ লাগে। সে ভাবে—কেবল সে-ই মনে হয় জগতে আমড়া কাঠের ঢেঁকি। কিন্তু, যারা আজ উন্নতির শিখরে গেছে, তারা যে কতো ঝড়-ঝাপ্টা, কতো ব্যর্থতা পাড়ি দিয়ে সেখানে গেছে সেই গল্পটা অন্ধকারে থেকে যায়।

    সুতরাং, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যা দেখেন তা খণ্ড-সত্য। পূর্ণ সত্য হলো—দুনিয়ার প্রতিটা মানুষ দুঃখ, সুখ আর উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে যায়। এটুকু মাথায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে অনেক অযাচিত হতাশা থেকে আমরা বেঁচে যাবো, ইন শা আল্লাহ।

    আল্লাহ আমার রব সেই রবে আমার
  • এখানে ক্লিক করে ডাউনলোড করুন ‌

    এটা প্রথম পর্ব ৯০ পৃষ্ঠা আছে।।

    কেউ অনুরোধ করলে বাকি   পরে দিবো।

    কভার পেজে

    লিংক

Design a site like this with WordPress.com
Get started